ধনেপাতা বা সিলান্ট্রো বৈজ্ঞানিকভাবে Coriandrum sativum নামে পরিচিত এবং এটি পার্সলে পরিবারের (Apiaceae) অন্তর্গত। এটি একটি বার্ষিক ভেষজ, যা গোটা বিশ্বজুড়ে রান্নায় ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ল্যাটিন, আমেরিকা, এশিয়া এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। এটিকে ধনিয়া পাতা বা চাইনিজ পার্সলে বলা হয়, যদিও ধনিয়া সাধারণত উদ্ভিদের বীজকে বোঝায়।
ধনে গাছের পাতা (সিলান্ট্রো) এবং বীজ (ধনিয়া বীজ) উভয়ই ভোজ্য এবং রান্নায় ব্যবহৃত হয়, তবে তাদের আলাদা স্বাদ, গন্ধ এবং রন্ধন সম্পর্কীয় ব্যবহার রয়েছে। পাতাগুলি সাধারণত তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়, বীজগুলি শুকানো হয় এবং সেখান থেকে মসলা এবং বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। সিলান্ট্রোর একটি তাজা, সাইট্রাস স্বাদ রয়েছে। ধনিয়া পাতা গুলি সাধারণত সবুজ, মসৃণ এবং চিকন ভাবে বিভক্ত। এই গাছে ছোট সাদা ফুল হয়, বীজ গুলি কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং শুকনো অবস্থায় গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে থাকে।
ধনেপাতা হল একটি কম ক্যালরিযুক্ত ভেষজ, যা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলির ভালো উৎস হতে পারে।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ।
100 গ্রাম তাজা ধনেপাতার পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: 23
- কার্বোহাইড্রেট: 3.67 g
- প্রোটিন: 2.13 g
- ফ্যাট: 0.52 g
- ফাইবার: 2.8 g
- চিনি: 0.87 g
- Vitamin C: 27 mg
- Vitamin A: 6750 IU
- Vitamin K: 310 µg
- Vitamin B3: 1.114 mg
- Vitamin B6: 0.149 mg
- Vitamin B9: 62 µg
- ক্যালসিয়াম: 67 mg
- আয়রন: 1.77 mg
- ম্যাগনেসিয়াম: 26 mg
- ফসফরাস: 48 mg
- পটাশিয়াম: 521 mg
- সোডিয়াম: 46 mg
ভিটামিন: ধনেপাতায় রয়েছে বিটা- ক্যারোটিন যা শরীর ভিটামিন A তে রূপান্তর করতে পারে। এটি দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন K রক্ত জমাট বাধা থেকে মুক্তি দেয় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য গঠন করে। ভিটামিন C একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইউনিয়ন সিস্টেম সমর্থন, ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ক্ষত নিরাময় সহ বিভিন্ন শারীরিক সুস্থতায় অবদান রাখে।
খনিজ পদার্থ: ধনেপাতাতে অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মতো খনিজ রয়েছে। এই খনিজ গুলি হাড়ের স্বাস্থ্য, পেশীর ফাংশন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে।
খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: ধনেপাতায় উপস্থিত খাদ্যতালিকাগত ফাইবার হজমের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ধনেপাতার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। Various health benefits of coriander leaves.
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ধনেপাতায় ভিটামিন C এবং অল্প পরিমাণ ভিটামিন E সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিক্যাল এর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: ধনে পাতার মধ্যে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং আর্থ্রাইটিস এর মতো রোগ নিরাময় করে।
হজম স্বাস্থ্য: ধনেপাতা ঐতিহ্যগতভাবে হজমে সহায়তা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বদহজম, গ্যাস, অম্বল, পেট ফোলার সমস্যা উপশম করে। এই পাতায় এমন যৌগ থাকে যা পাচক এনজাইম ভালো রাখতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: এই পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই ভালো।
কোলেস্টেরল কমাতে: ধনে পাতা LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং HDL (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা হার্টকে ভালো রাখে।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য: এই পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যুক্ত যৌগ আছে যা নির্দিষ্ট ধরনের ব্যাকটেরিয়া গুলির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং খাদ্য জনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে কম ক্যালরি থাকে এবং ওজন কমানোর খাবারে এটি একটি সুস্বাদু সংযোজন হতে পারে। এদের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী আমাদের শরীরকে পূর্ণ এবং সন্তুষ্ট বোধ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্ন: ধনেপাতা টপিক্যালিও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্রণ, ত্বকের জ্বালা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
রান্নায় ব্যবহার
ধনিয়া পাতা একটি বহুমুখী ভেষজ এবং সাধারণত এটি সালসা, গুয়াকমোল, তরকারি, সুপ, সালাদ এবং আরও বিভিন্ন খাবারের শেষে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালীতে একটি অপরিহার্য উপাদান এবং এটির সাথে থাকা খাবারগুলির একটি অনন্য স্বাদ যোগ করে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ভাবে ধনেপাতা ব্যবহার করা যায়। যেমন ধনেপাতার চাটনি, বড়া, ভর্তা, ধনেপাতার পরোটা, শরবত, মাংস ও সবজি উপরে ভালো স্বাদ ও গন্ধের জন্য ব্যবহার হয়।
ধনে পাতা খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some Side Effects of Consuming Coriander Leaves.
এলার্জি: ধনেপাতা থেকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক, তবে কিছু ব্যক্তির মধ্যে এটি ঘটতে পারে। লক্ষণ গুলির মধ্যে এই চুলকানি, ফোলা ভাব, আমবাদ, শ্বাসকষ্ট, গা-হাত লাল হয়ে যাওয়া মতো অসুবিধা হতে পারে। যদি আপনি ধনেপাতা খাওয়ার পর এলার্জির মতো সমস্যায় পড়েন তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়ার ফলে বদ হজম, গ্যাস, ডায়রিয়া, পেট ফোলা ও অম্বলের মতো সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ত্বকের সমস্যা: ধনেপাতা খাওয়া কিংবা ব্যবহারের পর কিছু ব্যক্তির ত্বকে জ্বালা বা ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যদি তাদের সংবেদনশীল ত্বক থাকে বা অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে।
ওরাল এলার্জি সিনড্রোম (OAS): OAS হল এমন একটি অবস্থা যেখানে নির্দিষ্ট পরাগ থেকে এলার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের কাঁচা ধনেপাতা বা অন্যান্য খাবার খাওয়ার সময় হালকা এলার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব হতে পারে। এই উপসর্গ গুলো চুলকানি, মুখ লাল, গলা ফুলে যাওয়ার থেকেও বেশি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: সিলান্ট্রো নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ভিটামিন K সামগ্রীর কারণে রক্ত পাতলা করার ঔষধের সাথে এটি যোগাযোগ করতে পারে। আপনি যদি এই ধরনের কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন তবে আপনার ডায়েটে সিলান্ট্রো যোগ করার আগে একজন চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিন।