স্বাস্থ্যের উপকার পেতে খাবারে যুক্ত করুন গাজর। Carrot

গাজর হল মূল জাতীয় সবজি, যা সাধারণত লম্বা এবং সরু হয়। এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে Daucus carrot নামে পরিচিত। গাজরের মাথার দিকটা মোটা এবং নিচের দিকটা সরু আকৃতির হয়। তবে গাজরের কিছু জাত আছে যেগুলো গোলাকার আকৃতির ও হয়ে থাকে। গাজর তার উজ্জ্বল কমলা রঙের জন্য বিখ্যাত, তবে এর কিছু জাত বেগুনি, লাল, সাদা ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এর গায়ের চামড়া পাতলা, সরু এবং ভিতরের অংশ একটু কচকচে ধরনের, বেশ মজাদার, মিষ্টি স্বাদের হয়। গাজর কাঁচা অবস্থায় বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে এবং এর বিভিন্ন রন্ধনসম্পর্কীয় ব্যবহারও রয়েছে। 

গাজর বিভিন্ন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি সবজি, যাতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও খাদ্যতালিকাগত ফাইবার। 

Carrots with leaves are placed on the table

গাজরের পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ উপকারিতা। 

100 গ্রাম কাঁচা গাজরের পুষ্টি উপাদান: 

  • ক্যালোরি: 41 কিলোক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট: 9.6 গ্রাম
  • খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 2.8 গ্রাম
  • চিনি: 4.7 গ্রাম
  • প্রোটিন: 0.9 গ্রাম
  • চর্বি: 0.2 গ্রাম
  • Vitamin A: 835 mcg (DV: 74%)
  • Vitamin C : 5.9 মিলিগ্রাম (DV: 7%)
  • Vitamin K : 13.2 এমসিজি (DV: 11%)
  • পটাসিয়াম: 320 মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: 33 মিলিগ্রাম
  • আয়রন: 0.3 মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: 12 মিলিগ্রাম

ভিটামিন ও খনিজ: টমেটোতে পাওয়া ভিটামিন A বিটা ক্যারোটিন রূপে আছে। এটি চোখের সুরক্ষা, ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করে। ভিটামিন C একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, কোলাজেন গঠন, ত্বকের যত্নে বিশেষ অবদান রাখে। ভিটামিন K শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা থেকে মুক্তি, হাড়ের স্বাস্থ্য ও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়াম হার্টকে সুরক্ষিত রাখে, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য সমর্থন করে, এবং শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে যা সঠিক হাইড্রেশন ও কিডনির সমস্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকাগত ফাইবার হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে। আরো কিছু খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। 

Many carrots together

গাজর বিভিন্ন পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সবজি, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। Nutrition’s and Health Benefits of Carrots. 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: গাজর আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে একটি ভালো বিকল্প। এতে বিটা ক্যারোটিন এর উচ্চ মাত্রা রয়েছে, যা ভিটামিন A তে রূপান্তরিত করে। এটি রেটিনার স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে এবং আমাদের সুস্থ দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখে। 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান: গাজরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন C। এগুলি ফ্রি রেডিকেলের কারণে কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, কিছু ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

স্বাস্থ্যকর ত্বক: এতে উপস্থিত ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

স্বাস্থ্যকর হৃদয়: এতে উপস্থিত পটাশিয়াম এর উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এর ফাইবার উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ: এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল গুলি নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ক্যান্সার যেমন ফুসফুস, স্তন এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। 

ওজন নিয়ন্ত্রণ: গাজরে ক্যালরির মাত্রা কম এবং ফাইবারের মাত্রা বেশি যা শরীরের খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, খুব দ্রুত ওজন কমায়। 

পেটের স্বাস্থ্য রক্ষা: খাদ্যতালিকাগত ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, যা একটি স্বাস্থ্যকর অন্তরের প্রচার করে। 

হাইড্রেশন: গাজরের উচ্চ জলের উপাদান একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে খাওয়া হলে এটি শরীরকে হাইড্রেট এবং রিফ্রেশিং রাখতে সাহায্য করে। 

Roasted Carrots

রান্নার ব্যবহারে গাজর

গাজর একটি সুস্বাদু সবজি যা খোসা ছাড়িয়ে কিংবা খোসা সহ খাওয়া যেতে পারে। গাজরের অতিরিক্ত রঙের জন্য এটিকে কাঁচা অবস্থায় সালাদ কিংবা আরো বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার যেমন, গাজরের হালুয়া, মিষ্টি, লাড্ডু, জুস, গাজর দিয়ে সবজির মিক্স তরকারি, গাজর ভাজা, কেক, পরোটা, স্যান্ডউইচ, ক্ষীর সন্দেশ, পুডিং, রসমালাই এবং পোলাও রান্না করার ক্ষেত্রে গাজর ব্যবহার হয়ে থাকে। 

Carrots are cut into small pieces

গাজর খাওয়ার অপকারিতা। Disadvantages of eating Carrots.

ক্যারোটেনমিয়া: গাজরে বেশি পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে এবং এটি অত্যধিক গ্রহণের ফলে ক্যারোটেনমিয়া নামক একটি অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সময় ত্বক হলুদ বা কমলা হয়ে যায়, বিশেষ করে হাতের তালু এবং পায়ের তালু। 

এলার্জি: কিছু ব্যক্তির গাজর খাওয়ার পরে এলার্জি হতে পারে এটি অন্য খাবারের সাথে ক্রস-রিঅ্যাক্টিভিটি করতে পারে। যদিও বা গাজরে এলার্জি তুলনামূলকভাবে বিরল, তবে গাজর খাওয়ার পরে যদি চুলকানি, শ্বাসকষ্টের মতন অসুবিধা লক্ষ্য করেন তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। 

চিনির উপাদান: গাজরের প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, বিশেষ করে কাঁচা অবস্থায়। যদিও অনেক খাবারের চেয়ে এতে চিনির উপাদান তুলনামূলকভাবে কম, তবে যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক নেই, যেমন ডায়াবেটিস যুক্ত রোগী। তাদের ক্ষেত্রে সচেতনতা মেনে খাওয়া উচিত। 

ডাইজেস্ট প্রবলেম: ফাইবার বেশির ভাগ মানুষের জন্য উপকারী, তবে খুব বেশি পরিমাণ ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। 

অক্সালেট: অন্যান্য সব সবজির মতো গাজরেও অক্সালেট থাকে, এটি এমন একটি যৌগ যা কিডনির সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষতি করতে পারে। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *