কালোজিরার আদিবাস দক্ষিণ ইউরোপে। এর বোটানিক্যাল নাম Nigella sativa এবং এটি বাংলায় কালোজিরা, হিন্দিতে কালোঞ্জি ও সংস্কৃততে কৃষ্ণজিরা নামে পরিচিত এবং ইংরেজিতে Black Cumin, Nigella নামে পরিচিত।বর্তমানে বিশ্বের বাজারে যত প্রকার মসলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি পরিচিত নাম হল কালোজিরা। মসলা ছাড়াও নানার ধরনের ঔষধ তৈরিতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এই কালোজিরায় Nigella পদার্থ থাকার কারণে বীজের স্বাদ কিছুটা তিক্ত হয়ে থাকে। এটি ভারতের আসাম, হিমাচল প্রদেশ, বিহার সহ ও আরো প্রচুর জায়গায় ব্যাপক পরিমাণে চাষ হয়।
কালোজিরা গাছ হল একটি ছোট ভেষজ উদ্ভিদ, এটি সাধারণত ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বড় হতে পারে। এর সবুজ রঙের পাতা এবং সাদা ও বেগুনি ফুল হয়। এই উদ্ভিদ কিছুটা ক্যাপসুল আকৃতির একটি ফলের সৃষ্টি করে, যার ভিতরে অসংখ্য ক্ষুদ্র কালো বীজ থাকে। এই বীজ বিভিন্ন রান্নায় এবং ঔষধি প্রয়োগে ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে।
মাসিক ঋতুচক্র এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে কালোজিরার ব্যবহার। Use of black cumin to reduce menstrual cycle and menstrual pain.
- নিয়মিত মাসিক ঋতুচক্র: যে সকল মহিলাদের অনিয়মিত কিংবা অল্প বা অধিক পরিমাণে ঋতুস্রাবের জন্য কষ্ট হয়ে থাকে তাদের এই ঋতুস্রাব হওয়ার ৫ থেকে ৭ দিন আগে থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম করে কালোজিরা সামান্য গরম জলের সঙ্গে সকালে ও বিকালে খেতে হবে। তারপরও যদি কারো এই সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে পরপর ২ থেকে ৩ মাস এই একই নিয়ম মেনে খাওয়ার ফলে সমস্যা কমে যেতে পারে।
- বাধক ব্যথা: বেশ কিছু মেয়েদের ঋতুস্রাব চলাকালীন বাধক ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়, এটি এমন একটি সমস্যা যেটা শরীরের জরায়ুর রক্ত গ্রন্থির সাথে অন্যান্য রক্তের সংগ্রাম চলতে পারে। এই সময়ে অতিরিক্ত পেটে যন্ত্রণা, গা-হাত অবশ হয়ে যাওয়া, কোমরে ব্যথা, বমি-বমি ভাব, অযথা খিটখিট করা সহ আরো মানসিক ভারসাম্যের বদল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে কালোজিরা গুলোকে সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে, তারপর ৭৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ কালোজিরা গুঁড়ো নিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় অল্প গরম জল সহ খেতে হবে (মাসিক চলাকালীন এটি খাওয়ার দরকার নেই)। ২ থেকে ৩ মাস খেলেই এর ফলাফল লক্ষ্য করা যেতে পারে।
কালোজিরা তেলের ব্যবহার। Uses of black cumin oil.
কালোজিরার তেল খুবই উপকারী ঔষধি তেল। এই তেলটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর অনন্য গন্ধের কারণে ঐতিহ্যগত ওষুধ এবং রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
- এই তেল হজম সংক্রান্ত সমস্যা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। এই তেলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে বলে গবেষকরা ধারণা করে থাকে। হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট রোগেরও মহা ঔষধ হিসেবে এই তেল ব্যবহার হয়ে থাকে।
- কালোজিরার তেল সম্পূরক আকারে অর্থাৎ ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য খাওয়া যেতে পারে।
- এই তেল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির পুষ্টিকর এবং হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলের কন্ডিশনার হিসেবে খুবই ভালো।
- কালোজিরার তেল বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে যেমন পিঠে, কোমরে, হাটুতে সহ বিভিন্ন পুরনো ব্যথা কমানোর সাথে সাথে মাথা ব্যথা কমানোর সাথে, এই তেল মাথায় ম্যাসাজ করার ফলে নতুন চুল গজাতে বিশেষ সাহায্য করে।
- এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, কিডনি ভালো রাখে এবং দাঁত মজবুত করে।
কালোজিরা খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some side effects of consuming black cumin seeds.
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষের কালোজিরার বীজ থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়া গুলি ত্বকের চুলকানি, ফুসকুড়ি, ফোলা ভাব এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির কালোজিরা থেকে এলার্জি আছে জানেন তবে অবশ্যই এটি খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস: কালোজিরার বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিস থেকে থাকে কিংবা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ওষুধ করো গ্রহণ করে থাকে, তবে কালোজিরা খাওয়ার আগে অবশ্যই তাদের নির্দিষ্ট মাত্রায় খেতে হবে কিংবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
ত্বকের সমস্যা: কালোজিরার তেল প্রয়োগ করার ফলে কিছু মানুষের ত্বকের সংবেদনশীলতা বা ত্বকে জলার মতো সমস্যা হতে পারে। যদি এই তেল ব্যবহারের ফলে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তবে অবশ্যই এটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন।