জবা (Hibiscus) হল Malvaceae পরিবারের অন্তর্গত ফুলের উদ্ভিদের একটি বৈচিত্র্যময় বংশ। এটি চাইনিজ হিবিস্কাস (Chinese hibiscus) বা চিনা গোলাপ (China rose) নামেও পরিচিত। এবং এটি মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় ফুল। জবা ফুলের শত শত প্রজাতি রয়েছে এবং তারা তাদের শোভাময় ট্রাম্পেট-আকৃতির ফুলের জন্য পরিচিত, যা লাল, নীল, হলুদ, সাদা, কালো, ঘিয়া, গোলাপি, কমলা ও বেগুনি রঙ সহ বিভিন্ন রঙের হয়। এই ফুলগুলির সাধারণত পাঁচটি পাপড়ি এবং কেন্দ্রে একটি নলাকার পুংকেশর থাকে, পাতাগুলি প্রায়শই হালকা লম্বা-গোলাকার এবং চকচকে সবুজ চেহারার হয়। তবে এই ফুলের আঁকার, রঙ এবং আকৃতি প্রজাতি ও চাষের উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে।
জবা ফুল সাধারণত বিভিন্ন রন্ধন প্রণালীতে ব্যবহৃত হয় এবং এর ঔষধি ব্যবহারও রয়েছে। এই ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে চা তৈরি হয়, যা টার্ট এবং সতেজ স্বাদ এর জন্য পরিচিত। এছাড়াও জ্যাম, জেলি, পানীয়, এমনকি প্রাকৃতিক খাবারের রঙ হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। জবা ফুলের দুটি সাধারণ জাতের মধ্যে রয়েছে, হার্ডি হিবিস্কাস ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় হিবিস্কাস। হার্ডি হিবিস্কাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বহুবর্ষজীবী গাছ, যা ঠান্ডা-সহনশীল। এটি তাদের বড়, রঙিন ফুলের জন্য পরিচিত। গ্রীষ্মমন্ডলীয় হিবিস্কাস বা উপক্রান্তীয় হিবিস্কাস উষ্ণ জলবায়ুতে জন্মায়। এটি সাধারণত আকারে ছোট হয় এবং হালকা শীতের অঞ্চলের উদ্ভিদ।
![Yellow and red Hibiscus flower](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/Yellow-and-red-Hibiscus-flower.jpg)
জবা ফুলের পুষ্টি (Nutrition’s) ও খনিজ।
100 গ্রাম জবা ফুলের পুষ্টি:
- ক্যালোরি: 16 kcal
- প্রোটিন: 2.68 g
- কার্বোহাইড্রেট: 0.89 g
- চিনি: 0.45 g
- কোলেস্টেরল: 18 mg
- ক্যালসিয়াম: 67 mg
- আয়রন: 1.21 mg
- সোডিয়াম: 379 mg
খনিজ এর উপকারিতা: মজবুত হাড় ও দাঁত, রক্ত জমাট বাঁধায় এবং পেশির কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ। লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন এবং সরাসরি অক্সিজেন পরিবহনের জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জবা ফুলে পরিমিত পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা নিয়মিত খাওয়া হলে আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। সোডিয়াম শরীরে সঠিক তরল ভারসাম্য বজায় রাখা জন্য প্রয়োজনীয়।
![Pink color Hibiscus](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/Pink-color-Hibiscus.jpg)
জবা ফুলের ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা। Medicinal properties and benefits of Hibiscus flower.
জবাফুল তাদের অসংখ্য ঔষধি গুণাবলী এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য অপরিচিত।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: জবা ফুলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ফ্লাভোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিন, শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিক্যাল এর ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: এই ফুলের চায়ে এন্টিহাইপারটেনসিভ বৈশিষ্ট্য আছে, যা নিয়মিত খাওয়া হল উচ্চ রক্তচাপ কমতে পারে।
ওজন ব্যবস্থাপনা: জবা ফুল থেকে তৈরি চা শরীরকে তৃপ্তি দেয় এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণে বাধা দিয়ে ওজন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে।
লিভার সুরক্ষা: এই ফুলের রসে হেপাটোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা লিভারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের প্রচার করতে সহায়তা করে।
হার্টের স্বাস্থ্য: এই ফুলের চা নিয়মিত সেবনে কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কম হয়।
চুলের যত্ন: জবা ফুল চুলকে শক্তিশালী করে, চুল পড়া কমায় এবং মাথার ত্বকের অবস্থার উন্নতি করে চুলের স্বাস্থ্যকে আরও ভালো করে তোলে। এর পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির কারণে চুলের বৃদ্ধি, চকচকে ভাব এবং চুলের ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়তা: হিবিস্কাস চা শরীরে হালকা রেচন হিসেবে কাজ করে, যা হজমে সহায়তা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
মুত্র বর্ধক বৈশিষ্ট্য: জবা ফুলের চা বা রস একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি প্রস্রাবের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শরীরে অতিরিক্ত তরল নির্মূলে সহায়তা করে।
কিডনি সুরক্ষা: এই ফুলের লিকুইড ফর্মাল ব্যবহারে প্রস্রাবে নির্দিষ্ট খনিজ গুলির ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং কিডনিতে পাথর গঠন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আন্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব: এই ফুল প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য গুলি প্রদর্শন করে, যেমন বাতের সমস্যা, শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথা সহ বিভিন্ন ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে।
![White color Hibiscus flower on tree](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/White-color-Hibiscus-flower-on-tree.jpg)
জবা ফুলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some Side Effects of Hibiscus Flower.
নিম্ন রক্তচাপ: জবা ফুলের চা রক্তচাপ কমাতে পারে, যদি কোন ব্যক্তির ইতিমধ্যেই নিম্ন রক্তচাপ থাকে বা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ সেবন করে, তাহলে তাদের অত্যাধিক পরিমাণে এই চা সেবন করা থেকে বিরত থাকা দরকার।
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদান: গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের বেশি পরিমাণে এই ফুলের চা খাওয়া থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এটি হরমোনের মাত্রা প্রভাবিত করে, গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
রেচন প্রভাব: কিছু ব্যক্তির মধ্যে এই চা একটি হালকা রেচন প্রভাব আনতে পারে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে মলত্যাগ বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পেটের অস্বস্তি: এই ফুলের কোন ধরনের পণ্য অত্যধিক সেবনে কিছু মানুষের মধ্যে বমি-বমি ভাব, পেট খারাপ সহ ডায়রিয়া মতো অস্বস্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি পরিমাণ মতো গ্রহণ করা কিংবা শুরুতে অল্প-অল্প করে সেবন করা উচিত।
আয়রন শোষণের সাথে মিথস্ক্রিয়া: জবা ফুলে পলিফেনল নামক একটি যৌগ রয়েছে যা খাদ্যতালিকাগত নন-হিম আয়রন শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির আয়রনের ঘাটতি থাকে, তবে খাবার বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট এর সাথে জবা ফুলের কোন রকম পণ্য না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।