মূলা হলো এক ধরনের ভোজ্য মূল জাতীয় উদ্ভিদ, যা Brassicaceae পরিবারের অন্তর্গত। এর মধ্যে ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি সহ আরও অন্যান্য সবজি রয়েছে। প্রায় সারা বিশ্বে মূলার চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে আসছে। এই সবজি তাদের খাস্তা টেক্সচার, উজ্জ্বল রঙ এবং হালকা তীক্ষ্ণ গন্ধের জন্য পরিচিত। এগুলোর বিভিন্ন আকার ও রঙ হয়, তবে সবচেয়ে সাধারণের মধ্যে রয়েছে সাদা মূলা ও লাল মূলা, এছাড়াও কালো, বেগুনি ও তরমুজ মূলা আছে, যার ভিতরের অংশ লাল ও বাইরে সবুজ হয়।
মূলা ভিটামিন C, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফোলেট, ভিটামিন B2 সহ আরও বিভিন্ন খনিজ পদার্থের একটি ভালো উৎস। এছাড়াও ঐতিহ্যগত ভেষজ ঔষধে মূলা ব্যবহার করা হয়ে আসছে, যার মধ্যে হজম সংক্রান্ত সমস্যা গুলির প্রতিকার এবং মূত্র বর্ধক রয়েছে।
মূলা এবং তার পাতা একটি সুষম খাদ্যের বহুমুখী এবং পুষ্টিকর সংযোজন। এগুলো বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহার করা হয়, এবং এগুলি কাঁচা বা রান্না করে যেভাবেই খান না কেন, এটি আপনার খাবারে এটি সুস্বাদু স্বাদ এবং পুষ্টি যোগ করতে পারে।
মূলার পুষ্টিগুণ, খনিজ ও ভিটামিন।
100 গ্রাম কাঁচা মূলার পুষ্টিগুণ:
- ক্যালোরি: 16
- ফ্যাট: 0.1 g
- প্রোটিন: 0.7 g
- কার্বোহাইড্রেট: 3.4
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 1.6 g
- চিনি: 1.9 g
- সোডিয়াম: 39 mg
- পটাশিয়াম: 233 mg
- Vitamin C: 24%
- Vitamin B6: 5%
খনিজ ও ভিটামিন: মূলা ভিটামিন C এর একটি ভালো উৎস, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমর্থন করে, শরীরকে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে এবং আমাদের ত্বককে সুন্দর করে তোলে।
এছাড়াও এতে উপস্থিত ফোলেট কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বিকাশমান ভ্রুনের নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধ করার জন্য এটি খুবই দরকার। রিবোফ্ল্যাভিন শক্তি উৎপাদন এবং চর্বি ওষুধ এবং স্টেরয়েডের বিপাকের সাথে জড়িত ও নিয়াসিন খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করা, স্বাস্থ্যকর ত্বক, স্নায়ু এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
মূলাতে উপস্থিত পটাশিয়াম একটি ইলেকট্রোলাইট, যা রক্তচাপ, পেশী সংকোচন এবং শরীরে তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও সেলেনিয়াম সহ অন্যান্য খনিজ রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে।
মূলা খাওয়ার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। There are several significant health benefits of eating radishes.
পাচক স্বাস্থ্য: মূলা খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস, এটি স্বাস্থ্যকর হজমে সহায়তা করে। ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন ব্যবস্থাপনা: এই সবজিতে কম পরিমাণ ক্যালরি এবং বেশি পরিমাণ ফাইবার রয়েছে, যা একটি কম শক্তি ঘনত্বের খাবার তৈরি করে। আপনার ডায়েটে এটি যুক্ত করলে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য: এতে উপস্থিত ফাইবার এবং পটাশিয়াম আমাদের শরীরে রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম ভাসোডিলেশনকে উৎসাহিত করে, যা রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে এবং হৃদপিন্ডের উপরে চাপ কমায়।
ত্বকের স্বাস্থ্য: ভিটামিন C একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা বার্ধক্য জনিত লক্ষণ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে তোলে।
ডিটক্সিফিকেশন: এতে প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন এবং অতিরিক্ত তরল নির্মূল করতে সহায়তা করে, যা কিডনির স্বাস্থ্য এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া সমর্থন করে।
হাঁপানি থেকে মুক্তি: কনজেস্টিভ বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণে ঐতিহ্যগত ঔষধে, মূলা হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসযন্ত্রের অবস্থার লক্ষণ গুলো উপশম করতে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।
আন্টি ইনফ্লেমেটরি ইফেক্ট: এর কিছু যৌগ অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য অধ্যয়ন করা হয়েছে, যা আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য প্রদাহের সাথে জড়িত অবস্থার নির্মূল করতে পারে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: এর কিছু যৌগ আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন করতে সাহায্য করতে পারে বলে গবেষকরা পরামর্শ দিয়ে থাকে, যা ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের একটি পুষ্টিকর খাদ্যের সমাহার হতে পারে।
মূলা রান্না
মূলার প্রতিটি অংশই ভোজ্য, তবে সবচেয়ে বেশি এটির শিকড় অর্থাৎ মূলাকে গ্রহণ করা হয়। এর পাতাকে সালাদ কিংবা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া মূলার আরো বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপি গুলোর মধ্যে হল- মূলার পরোটা, মূলার ঘন্ট, ভাজা, শাক চচ্চড়ি, মূলার ডাল, মূলা দিয়ে বিভিন্ন মাছের তরকারি, পকোড়া, ছেঁচকি এবং বিভিন্ন খাবারের গার্নিশিং ও সালাদ হিসেবে মূলা ও মূলার পাতা ব্যবহৃত হয়।
মূলা স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকে খুব ভালো, তবে এটি খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। Some harmful aspects of eating radish.
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স: মুলার একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রার উপর তুলনামূলকভাবে প্রভাব ফেলে এবং খাওয়ার উপর নির্ভর করে GI এর মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে। আলাদাভাবে চিনি যুক্ত করায় মূলাতে গ্লাইসেমিক বাড়তে পারে, যা ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
হজমে অস্বস্তি: এমনিতেই মূলা খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের একটি ভালো উৎস যা হজমের জন্য অনেক উপকারী। তবে কিছু ব্যক্তির প্রচুর পরিমাণে এটি খাওয়ার পর হজমে অস্বস্তি, পেট ফোলা, গ্যাস, অম্বল সহ ডায়রিয়ার মতো অসুবিধা হতে পারে।
এলার্জি: কিছু ক্ষেত্রে মূলা খাওয়ার পর এলার্জি মতো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যদিও এটি খুবই বিরল তবে কিছু মানুষের জন্য এই মূলা ক্ষতিকারক হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিংবা অল্প পরিমাণে গ্রহণ করে দেখা উচিত।
অক্সালেট: এতে অক্সালেট রয়েছে যা কিছু সংবেদনশীল ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর গঠনে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির কিডনিতে পাথর কিংবা এই ধরনের ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে তাদের মূলা খাওয়া কিংবা উচ্চ অক্সালেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।
মশালাদার মূলা: কিছু মূলার জাত, বিশেষ করে রেড গ্লোব মূলা সামান্য মরিচ যুক্ত বা মশালাদার স্বাদযুক্ত হয়। যদিও এটি অনেকের খুবই পছন্দের একটি খাবার, তবে কিছু ব্যক্তির এতে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে।