আম। Mango

আম একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং সাস্থকর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি ম্যাঙ্গিফেরা প্রজাতির অন্তর্গত। এটি ভারত ছাড়া আরও অনেক দেশেই চাষ করা হয়ে থাকে। আম সাধারণত ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার আকৃতির হয়ে থাকে। আম গাছে ছোট ছোট সাদা ফুল ধরে যাকে আমের মুকুল বলা হয়। আম একগুচ্ছে ধরে থাকে এবং এটি একটি বীজ যুক্ত হয়। ত্বকের রঙ বিভিন্ন প্রজাতির পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে সবুজ থেকে হালকা হলুদ, কমলা বা লাল হতে পারে। কাঁচা অবস্থায় আমের স্বাদ টক ও পাকা অবস্থায় আমের স্বাদ অমৃতের মতো মিষ্টি হয়ে থাকে। 

আম গাছ সাধারণত 34-35 মিটার লম্বা হয় এবং এর কিছু প্রজাতিতে 400- 500বছর বয়সেও ফল ধরতে দেখা গেছে। আমের অসংখ্য জাত আছে, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বাদ, আকার এবং রং রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় গুলির মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, খিরসাপাত, কাঁচামিঠা, গোপাল খাস ইত্যাদি।

আমকে হাইড্রেট ফল হিসেবে ধরা হয়, কারণ এতে 80-85% জল থাকে। আম শুধু সুস্বাদু নয়, আমের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আম প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ সম্পন্ন।

Many mangoes are hanging from the tree

আমের পুষ্টি (Nutrition’s) এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা

আম বিভিন্ন ভিটামিনের সমৃদ্ধ উৎস, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।

প্রতি 100 গ্রাম আমের পুষ্টি:

  • ক্যালোরি: 60 কিলোক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট: 15 গ্রাম
  • চিনি: 14 গ্রাম
  • ফাইবার: 1.6 গ্রাম
  • প্রোটিন: 0.82 গ্রাম
  • চর্বি: 0.38 গ্রাম
  • vitamin C: 36.4 মিলিগ্রাম (দৈনিক প্রস্তাবিত খাওয়ার প্রায় 60%)
  • vitamin A: 54 μg (প্রতিদিনের প্রস্তাবিত খাওয়ার প্রায় 7%)
  • ফোলেট: 14 μg
  • vitamin E: 0.9 মিলিগ্রাম
  • vitamin K: 4.2 μg
  • পটাসিয়াম: 168 মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: 9 মিলিগ্রাম

১. ভিটামিন: আম হলো ভিটামিন A, C, E, K সহ অন্যান্য B vitamin যেমন- থায়ামিন (B1), রিবোফ্লাভিন (B2), নিয়াসিন (B3), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (B5), বায়োটিন (B7) এবং কোবালামিন রয়েছে।

ভিটামিন A সুস্থ দৃষ্টি বজায় রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সমর্থন করে এবং ভিটামিন E শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে। ভিটামিন C শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আম অল্প পরিমাণে ভিটামিন K সরবরাহ করে, যা রক্ত জমাট বাঁধা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমে থাকা ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের বিকাশ এবং কার্যকারীতার পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি বিপাকের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। আমে মাঝারি পরিমাণে ফোলেট থাকে, যা কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধির জন্য একটি অপরিহার্য ভিটামিন। ভ্রূণের সঠিক বিকাশের জন্য এটি গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

২. খনিজ: আম শুধু ভিটামিন সমৃদ্ধ নয় বরং এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যে অবদান রাখে। একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে, আম আপনার খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ যোগ করার জন্য একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর উপায় প্রদান করতে পারে। খনিজের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, তামা, জিঙ্ক। 

  • আম হল পটাশিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা সঠিক হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা, শরীরের রক্তচাপ ও তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। 
  • ম্যাগনেসিয়াম শরীরে শত শত জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। এটি পেশী এবং স্নায়ু ফাংশন এ ভূমিকা পালন করে।
  • আমের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • আমে থাকা ফসফরাস শক্তি বিপাক এবং কোষ গঠনের সাথে জড়িত।
  • তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা আয়রন শোষণ কে সমর্থন করে, কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত এনজাইমগুলোর কাজে সহায়তা করে।
  • আমে থাকা জিঙ্ক ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা, ক্ষত নিরাময় এবং ডিএনএ সংশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩.জলের পরিমান: একটি পাকা আমে ওজন অনুসারে প্রায় 80-85% জল থাকে। আমের বেশিরভাগ ওজন জল দ্বারা সমৃদ্ধ, এটি একটি হাইড্রেটিং ফল এবং বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। আম ফল পাকার সাথে সাথে রসালো এবং আরও জল সমৃদ্ধ হয়, যার কারণে স্বাদ এবং মিষ্টতা বাড়ে। আপনার ডায়েটে আম অন্তর্ভুক্ত করা হাইড্রেটেড থাকার একটি ভালো উপায় হতে পারে এবং আম থেকে যে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ হয় তা থেকে উপকৃত হতে পারে।

Cut mangoes are placed on the table

আম খুব পুষ্টিকর একটি ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কিছু উপকারিতা প্রদান করে। Health benefits of Mango.

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: আমে অ্যাস্ট্রাগালিন, গ্যালিক অ্যাসিড, কোয়ারসেটিন এবং ম্যাঙ্গিফেরিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল গুলোকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।

ইমিউন সিস্টেম: আমের মধ্যে  উচ্চ পরিমানে ভিটামিন C রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীররের অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

হার্টের স্বাস্থ্য: আমের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এবং ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

হজমে সহায়তা: আমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।

চোখের স্বাস্থ্য: আমে থাকা ভিটামিন A বিটা-ক্যারোটিন বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD) এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 

ত্বকের স্বাস্থ্য: আমের ভিটামিন A এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে Uv ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে, কোলাজেন উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখে।

Mango Pickle

রান্নায় ব্যবহার

ফল ছাড়া আম কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় রান্নার কাজে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমের স্বাদ, স্বাস্থ্যকর গুণ এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির রান্নার স্বাদে এর ব্যবহার প্রচুর। এগুলো তাজা, টুকরো-টুকরো করে বা কেটে খাওয়া যেতে পারে। আমের স্মুদি, জুস, সালাদ, চাটনি, আম পাই, আম কাঁচা মরিচ, আম পান্নার মিঠাই, আইসক্রিম, আমের টক ডাল, আম দিয়ে টক আলুর তরকারি, মিষ্টি এবং মুখরোচক খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আপনি আমের বিভিন্ন আরোগ্যকর রেসিপি এবং ক্রিয়াকলাপ ব্যবহার করে অনেকগুলো স্বাদমত ও সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করতে পারেন। 

Many ripe mangoes

আমের অপকারিতা। Mango side effects.

আম অবিশ্বাস্যভাবে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হলেও, মনে রাখতে হবে এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। বিশেষ কিছু অবস্থায় আম খাওয়া বিপর্জনক হতে পারে। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে আম খাওয়া উচিত। 

অ্যালার্জি: কিছু মানুষের আম থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, মুখে কিংবা গায়ে অ্যালার্জি সিনড্রোম হতে পারে। আমের কিছু প্রোটিন অন্যান্য গাছের পরাগের সাথে ক্রস-প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া গুলির মধ্যে চুলকানি, ফোলা ভাব এবং আমবাত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ: কীটপতঙ্গ এবং রোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চাষের সময় আম কে কীটনাশক দিয়ে শোধন করা হয়। যদি ভালোভাবে না ধোয়া হয়, তাহলে এই রাসায়নিক পদার্থের অবশিষ্টাংশ আমের ত্বকে থেকে যেতে পারে, যা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

গ্যাস ও পেটের সমস্যা: অধিক পরিমাণে আম খেলে পেটে ব্যথা, কোলন ব্যথা, পাচন সংক্রান্ত সমস্যা এবং গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাগুলি আমের উচ্চ ফাইবার ও আমলের কারণে ঘটতে পারে।

আমের রস: আম গাছের রস এবং কাঁচা আমের ত্বকে উরুশিওল নামক একটি পদার্থ থাকে, যা কিছু মানুষের ত্বকে জ্বালা বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আমের রস যাতে মুখে না লাগে তা খেয়াল রাখতে হবে।

ওজন বা ডায়াবেটিস: আম অনেক মিষ্টি ও সুপারিশ্বরী খাদ্য সম্পর্কিত ফল হলেও, উচ্চ মাত্রায় আম খেলে ওজন বা ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি পরিমাণ আম না খাওয়াই ভালো।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *