শসা খাওয়ার সময় অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। Cucumber

শসা বৈজ্ঞানিকভাবে Cucumis Sativus নামে পরিচিত। শসা লাউ পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। এই ফল সারা বিশ্বে খুবই উন্নত মানের চাষ করা হয়। শসা গাছ সাধারণত লতার মতন নিচ থেকে উপরের দিকে ওঠে, এর মধ্যে ছোট ছোট সুক্ষ হলুদ রঙের ফুল হয় যা পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ই হয়ে থাকে। এবং এই গাছের পাতা ছোট, সবুজ রঙের এবং কিছুটা কুঁচকানো ধরনের হয়। শসা দেখতে সবুজ রঙের এবং লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে এবং ভিতরের অংশে ছোট ছোট অসংখ্য বীজ থাকে। শসার কিছু জাত আছে যেগুলো সাধারণ অনেক ছোট আকৃতির হয়। কিছু শসা আছে যেগুলো ২ ইঞ্চির থেকেও ছোট। শসা সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এতে খুবই কম ক্যালরি এবং উচ্চ জলের পরিমাণ রয়েছে, যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। 

শসার ফলন সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে হয়ে যায় এবং কিছু কিছু শসা পরিবর্তনশীলতার উপর নির্ভর করে। অতিরিক্ত পরিমাণে শসা পেকে যাওয়ার ফলে, কিছুটা তেতো ভাব এবং গায়ের চামড়া শক্ত হয়ে যেতে পারে। এই ফল শুধুমাত্র তার স্বাদ এর জন্যই পরিচিত নয়, এর বিশেষ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রয়েছে। এতে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার রয়েছে, যা আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রকার প্রদান করে। 

cucumber_benefits

শসার পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ

শসার 100 গ্রাম পুষ্টি উপাদান: 

  • ক্যালোরি -15 
  • মোট চর্বি – 0.1 g
  • সোডিয়াম – 2 mg
  • মোট কার্বোহাইড্রেট – 3.6 g
  • খাদ্যতালিকাগত ফাইবার – 0.5 g
  • চিনি – 1.7 g
  • প্রোটিন – 0.7 g
  • Vitamin K – 16.4 mcg
  • Vitamin C – 2.8 mg
  • Vitamin B1 – 0.027 mg
  • Vitamin B5 – 0.259 mg
  • পটাসিয়াম – 147 mg
  • ম্যাগনেসিয়াম – 13 mg
  • জল – 95.2 g

ভিটামিন ও খনিজ: শশায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন K রয়েছে, যা আমাদের শরীরের রক্ত জমাট বাঁধ ও হাড়ের মজবুতিতে সহায়তা করে। 

ভিটামিন C ইমিউন সিস্টেম সমর্থন, ফ্রি রেডিক্যাল এর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে কোষকে রক্ষা, শারীরিক অসুস্থতা এবং সংক্রমণ থেকে মুক্তি, কোলাজেন সংশ্লেষণ, রক্তনালী এবং সংযোজককারি টিস্যু প্রচার ও ত্বকের সুরক্ষা করতে সাহায্য করে। 

ভিটামিন B1 ও B5 স্নায়ু ফাংশন, খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা, শরীরকে কার্যকর ভাবে কার্বোহাইড্রেট ব্যবহার করতে সহায়তা করা এবং শক্তি উৎপাদন করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশী ফাংশন, স্নায়ু ফাংশন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি কমায়। 

Half_cucumber_in_the_table

শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা। Health Benefits of Cucumber. 

হাইড্রেশন এবং রিফ্রেশমেন্ট: শশায় উপস্থিত উচ্চ জলের পরিমাণ (প্রায় ৯৫%), শরীরকে হাইড্রেটিং এবং রিফ্রেশিং রাখতে দুর্দান্ত কার্যকরী। বিশেষ করে গরমের মৌসুমে শারীরিক কার্যকারিতায় এটি জলের অভাব মেটাতে এবং শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

ডায়েট মেন্টেন: শসা ডায়েট মেন্টেন করা মানুষদের জন্য খুবই উপযোগী। এতে কম পরিমাণ ক্যালরি থাকায় ওজন বৃদ্ধি পেতে দেয় না। সকালের জলখাবারে এটি স্যালাড হিসেবে গ্রহণ করলে বিভিন্ন মূল্যবান পুষ্টির উপকারিতা পাওয়া যায়। 

উন্নত হজম শক্তি: এই ফলের খাদ্যতালিকাগত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, নিয়মিত মলত্যাগ ও নির্দিষ্ট হজম শক্তিতে সহায়তা করে পেটকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

ত্বকের উজ্জ্বলতা: ত্বকের যত্নের গোপনীয়তায় শসা একটি বিশেষ কার্যকরী ফল। এটি কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল করে তোলে। শসা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের স্কিন কেয়ারে প্রয়োগ করা হয়। এটি ত্বকের কালো দাগ এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে খুবই কার্যকর। 

হার্টের সুরক্ষা: পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়ামের সংমিশ্রণ রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং লিগন্যানের মত যৌগ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। 

Cucumber salad with other things

শসার ব্যবহার

শসা কাঁচা এবং রান্না দুই অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য। তবে কাঁচা অবস্থায় শসা খেলে সেটি সবথেকে বেশি উপকারিতা প্রদান করতে পারে। এর বিভিন্ন ব্যবহার আছে, যেমন খাদ্যের দিক থেকে ব্যবহার হয় ঠিক ততটাই স্বাস্থ্যের দিক থেকেও ব্যবহার হয়। বড় আকৃতির শসা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে এবং ছোট শসা গুলি আচার করা যেতে পারে। এছাড়াও কিছু রেসিপি রয়েছে, শসার শরবত, সালাদ, দই শসার রায়তা, লস্যি, আইসক্রিম, শসা দিয়ে মাংস, চিংড়ি মাছ দিয়ে শসা, শসার খোসা বাটা, বাদাম দিয়ে শসার ঘন্ট। 

cucumber_Salat

শসা খাওয়ার সময় অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। Some harmful aspects of eating cucumber. 

শসা খাওয়ার আগে অবশ্যই সকলের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শসার সব থেকে ক্ষতিকারক দিক হলো কিউকারবিটাসিন (cucurbitacin) এর উপস্থিতি। এটি একটি প্রাকৃতিক যৌগ যা শসার স্বাদ তিক্ত এবং কিছু ক্ষেত্রে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। কিউকারবিটাসিন শসা, লাউ, চাল কুমড়া, তরমুজ, ঝিঙ্গা, ধুন্দল সহ এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে পাওয়া যায়, যা তাদের স্বাদ তিক্ত করে তোলে। উচ্চ পরিমাণে কিউকারবিটাসিন যুক্ত শসা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া, অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন এবং আরও গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা শসা খাওয়ার জন্য উপযোগী তবে বাড়ির বাগানে কিংবা বন্য জাতের শসা গুলোতে বেশি পরিমাণে কিউকারবিটাসিন থাকে। অতিরিক্ত তেতো স্বাদ এর শসা সব সময় খাওয়া থেকে এড়ানো উচিত। যদি শসা খাওয়ার পর আপনার শরীরে হজম কিংবা অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায় তবে তৎক্ষণাৎ একজন চিকিৎসকের কাছে যান। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *