তরমুজ স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর একটি সুস্বাদু ফল যা Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্গত। তরমুজ বৈজ্ঞানিকভাবে Citrullus lanatus নামে পরিচিত। এটি আফ্রিকার স্থানীয় কিন্তু এখন উষ্ণ জলবায়ু সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মায়। তরমুজ বড় গোলাকার বা আয়তাকার ফল যা কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই সবুজ রঙের হয়ে থাকে, তবে কিছু জাত আছে যেগুলি পাকা অবস্থায় হলুদ রঙের হয়ে থাকে। পাকা তরমুজ রসালো সহ একটি মিষ্টি ফল, সাদা বা কালো বীজ যুক্ত হয়, এবং কিছু বীজহীন জাত ও পাওয়া যায়, এটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। এবং এতে প্রায় ৯০% থেকে ৯২% জলের পরিমান থাকে, যার কারণে এই ফল শরীরকে হাইড্রেটিং রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজের পুষ্টি (Nutrition’s) এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ।
100 গ্রাম তরমুজের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: 30
- কার্বোহাইড্রেট: 7.6 গ্রাম
- চিনি: 6.2 গ্রাম
- প্রোটিন: 0.6 গ্রাম
- চর্বি: 0.2 গ্রাম
- ফাইবার: 0.4 গ্রাম
- Vitamin C: 8.1 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 14%)
- Vitamin A: 569 আইইউ (দৈনিক মূল্যের 11%)
- Vitamin B6: 0.045mg (দৈনিক মূল্যের 3%)
- পটাসিয়াম: 112 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 2%)
- ম্যাগনেসিয়াম: 10mg (দৈনিক মূল্যের 2%)
- ফসফরাস: 11 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 1%)
- ক্যালসিয়াম: 7mg (দৈনিক মূল্যের 1%)
- আয়রন: 0.2 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 1%)
১. ভিটামিন: তরমুজে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন যা আমাদের সাস্থের জন্য অনেক উপকারী। তরমুজে উপস্থিত ভিটামিন গুলি হল- ভিটামিন C, A, B6, B1 (থায়ামিন), B3 (নিয়াসিন), B5 (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড) ইত্যাদি।
তরমুজে থাকা ভিটামিন C একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
ভিটামিন A চোখের জন্য খুবই উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সমর্থন করতে সাহায্য করে।
তরমুজ ভিটামিন B6 সরবরাহ করে, যা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি গুলির বিপাক সহ শরীরের বিভিন্ন এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়াতে জড়িত, এর সাথে ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
তরমুজে থাকা থায়ামিন কার্বোহাইড্রেট কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং নিয়াসিন স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতায় সাহায্য করে।
এছাড়া এতে থাকা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি বিপাকের সাথে জড়িত। এটি হরমোন এবং কোলেস্টেরল উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. খনিজ: তরমুজের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সঠিক তরল ভারসাম্য, পেশী ফাংশন এবং স্নায়ু সংক্রমণ বজায় রাখে। পটাসিয়াম হার্টকে সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
তরমুজে থাকা ফসফরাস হাড়ের স্বাস্থ্য, DNA ও RNA সংশ্লেষণ এবং শরীরে শক্তি উৎপাদনে অবদান রাখে।
তরমুজে থাকা ক্যালসিয়াম শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত বজায় রাখে।
আয়রন লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন গঠন এবং সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।
জিঙ্ক বিভিন্ন এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়া এবং ইমিউন সিস্টেম ফাংশনের সাথে জড়িত একটি অপরিহার্য খনিজ।
৩. জলের পরিমান: তরমুজকে সবচেয়ে বেশি হাইড্রেটিং ফলগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়, কারণ এতে সব ফলের তুলনায় বেশি জল থাকে। তরমুজে ৯০%-৯২% জল থাকে।
গরম আবহাওয়ার সময় বা শারীরিকভাবে কাজ করার পর শরীরকে ঠান্ডা করার জন্য ও শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তরমুজ সবথেকে বেশি কার্যকারি।
তরমুজ খুবই পুষ্টিকর একটি ফল যা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা দেয়। Watermelon Health benefits.
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: তরমুজে ভিটামিন C এবং বিটা-ক্যারোটিন এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্রি-র্যাডিক্যাল এর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য: তরমুজে থাকা সিট্রুলাইন হলো একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা শরীর আর্জিনাইন এ রূপান্তরিত হয়। আর্জিনাইন রক্তনালী স্বাস্থ্যের প্রচার এবং রক্ত প্রবাহ উন্নত করার জন্য উপকারী, যা ভালো কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: তরমুজ নিয়মিত খেলে এটি আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, এতে থাকা আর্জিনাইন উপাদান এবং পটাশিয়ামের মাত্রার কারণে। পটাসিয়াম রক্তচাপের উপর সোডিয়ামের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ্য: তরমুজে থাকা ভিটামিন C বিটা-ক্যারোটিনের একটি ভালো উৎস, যা চোখের দৃষ্টি সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: তরমুজে উপস্থিত ভিটামিন A এবং C কোলাজেন উৎপাদন সমর্থন করে, UV রশ্মির ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে ত্বকের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: তরমুজে খুব কম পরিমান ক্যালোরি থাকে, এটি সেই সব মানুষদের জন্য উপযুক্ত যারা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
হজমের স্বাস্থ্য: তরমুজের মধ্যে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে, স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র গড়ে তোলে।
রান্নায় ব্যবহার
তরমুজ ফল ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। তরমুজ এবং তরমুজের খোসা দিয়ে বিভিন্ন খাবার বানানো যায়। আপনার রন্ধন সম্পর্কে অনুপ্রাণিত করার জন্য কিছু সৃজনশীল তরমুজ রান্নার রেসিপির নাম গুলো হলো – তরমুজ এবং পুদিনা আইস চা, জুস, আইসক্রিম, সালাদ, তরমুজ চিকেন, খোসা ভাজি, কেক, মোরব্বা, রাইস পেপার রোল, তরমুজ মিন্ট আগুয়া ফ্রেসকা। এছাড়াও আরও বিভিন্ন খাবার আছে যা আপনি বানিয়ে উপেভোগ করতে পারেন।
তরমুজের স্বাস্থ্যকর ফল হওয়ার সত্বেও কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়। Unhealthy aspects of watermelon.
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: তরমুজ থেকে কিছু মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জি গুলো চুলকানি বা আমবাতের মতো হালকা লক্ষণ থেকে শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো আরও গুরুতর প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে তরমুজ খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভালো।
শর্করার উপাদান: তরমুজে মিষ্টি এবং প্রাকৃতিক উপায়ে শর্করা থাকে। অন্যান্য ফলের তুলনায় তরমুজে ক্যালোরি বা চিনির পরিমাণ কম, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের তরমুজ খাওয়ার আগে কিছু নির্দেশ মেনে খাওয়া দরকার এবং একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
হজমে সমস্যা: খুব বেশি পরিমাণে তরমুজ খাওয়া বা তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলায় কখনও কখনও হজমে অসুবিধা হতে পারে এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা ও হতে পারে।
শ্বাসরোধের ঝুঁকি: তরমুজের কিছু কিছু জাতে বীজ থাকে, যেগুলি ছোট বাচ্চাদের বা যাদের গিলতে অসুবিধা হয় তাদের জন্য শ্বাসরোধের ঝুঁকি হতে পারে। তাই তরমুজ খাওয়ার আগে বীজ বেছে ফেলেদিন অথবা বীজ বিহীন তরমুজ গ্রহণ করুন।