সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত কোন না কোন মানুষ ক্যান্সারের মতো এই প্রাণঘাতী রোগের সাথে লড়াই করে চলেছে। ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে তা নিয়ে প্রায় সকলের মনেই অনেক প্রশ্ন থাকে। তবে এমন প্রশ্ন মনের মধ্যে রাখার চাইতে কিভাবে ক্যান্সার থেকে বাঁচতে পারা যাবে তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত ক্যান্সার একটি খুবই জটিল এবং বহুমুখী রোগ। পরিবেশ দূষণ বা পরিবেশগত এবং জেনেটিক্স কারণগুলি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে বিশেষ অবদান রাখে, তার জন্য খুবই মনোযোগ দিয়ে আমাদের কিছু নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে এবং কি কি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠব তা সনাক্ত করতে হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি খাবার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগকে রুখতে পারি।
ভারতে বিভিন্ন রকম এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও শাক সবজি আছে, তবে ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফল বা শাক সবজি উপকারী বলে জানা যায়নি। যদিও সব ধরনের ফল ও শাক সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে বিশেষ ৬টি ফল ও ৬টি সবজির নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যা খাওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং কিছু বায়োঅ্যাকটিভ যুক্ত খাদ্য আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারেন। এখানে বিশেষ ৬টি ভারতীয় ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ফল ও শাক সবজির উল্লেখ করা হলো——
ক্যান্সার এড়াতে ৬টি ফল ও তাদের উপকারিতা। 6 fruits and their benefits to prevent cancer.
ভারতে বিভিন্ন রকম এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফল আছে, তবে ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ফল উপকারী বলে জানা যায়নি। যদিও সব ফলই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে বিশেষ ৫ টি ফল আছে যা খাওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং কিছু বায়োঅ্যাকটিভ যুক্ত খাদ্য আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারেন। এখানে বিশেষ ৫টি ভারতীয় ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ফলের উল্লেখ করা হলো—
১. আপেল: আপেল এমন একটি ফল, যা উপকারিতায় সর্বপ্রথম বলা যেতে পারে। ফাইবারে ভরপুর আপেলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যৌগ যার মধ্যে কোয়ারসেটিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড অন্যতম। এই যৌগগুলি কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং আরো অন্যান্য ম্যালিগন্যান্সির মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
২. সাইট্রাস ফল: কমলালেবু, বাতাবি লেবু এবং আরো অন্যান্য লেবু ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী সাইট্রাস জাতীয় ফল, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন পাচনতন্ত্রের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৩. আঙ্গুর: আঙ্গুরের জাতের মধ্যে লাল এবং বেগুনি আঙ্গুর ফল গুলো বেশি উপকারী হয়ে থাকে, যা ক্যান্সারের কোষগুলিকে বৃদ্ধি পেতে বাধা দেয় এবং সেলুলার স্বাস্থ্যের প্রচার করে।
৪. বেদানা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর বেদানা অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৫. পেঁপে: বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সমৃদ্ধ পেঁপের মধ্যে বিটা-ক্যারোটিনের মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার বিরোধী প্রভাবের কারণে কাজ করে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার।
৬. পেয়ারা: কিছু গবেষণায় জানা গেছে পেয়ারার মধ্যে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং পুনিকালাগিন প্রদাহ এবং ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যান্সার থেকে বাঁচতে ৬টি সবজির গুণাগুণ। Properties of 6 vegetables to save from cancer.
১. পাতা যুক্ত সবুজ শাক: বিভিন্ন পাতা জাতীয় সবুজ শাক রয়েছে তবে তার মধ্যে সবথেকে বেশি উপকারী হল পালং শাক। কারণ এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। এবং এর মধ্যে থাকা ফোলেট এবং ক্যারোটিনয়েড গুলি নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২. গাজর: গাজর বিটা-ক্যারোটিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ অবদান রাখে। বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ’তে রূপান্তরিত হয়ে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীর এবং চোখ ভালো রাখতে প্রতিদিন খাবারের সাথে একটি করে গাজর খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. রসুন: রসুন আমরা বিভিন্ন রান্নায় স্বাদ এবং গন্ধের জন্য ব্যবহার করে থাকি, অবশ্যই এটি খাবারে ব্যবহার করা উচিত, তবে শুধুই স্বাদ এবং গন্ধের জন্য নয় বিশেষ উপকারিতার জন্য। কারণ এতে থাকা অ্যালিসিন ও অর্গানোসালফার নামক যৌগ ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য এবং বিশেষ করে পাচনতন্ত্রের ক্যান্সার কমানোর জন্য উপকারী।
৪. টমেটো: লাইকোপিন যুক্ত টমেটোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে সব থেকে বেশি উপকার পাকা লাল টমেটো থেকে পাওয়া যায়।
৫. ক্রুসিফেরাস সবজি: ব্রকলি ও ফুলকপি সালফোরাফেন নামক যৌগ দ্বারা সমৃদ্ধ। এই সবজি দুটি ক্যান্সারের কোষের বিকাশে বাধা দেয় এবং অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৬. হলুদ: হলুদ সবজির মধ্যে পড়ে না, এটি একটি মসলা যা বিভিন্ন খাবারের মধ্যে আমরা স্বাদ বা গন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। তবে এটি শুধু মসলা হিসেবে নয় বরং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে রয়েছে কর্কিউমিন, যা প্রদাহ বিরোধী এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কাঁচা হলুদ ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রাখে। প্রতিদিন সকালে ১টি করে কাঁচা হলুদ কিম্বা গরম দুধের সাথে গুঁড়ো হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।