কেন ছোলা আপনার প্রতিদিনের খাদ্যের অংশ হওয়া উচিত। 

ছোলা (Chickpeas) এক ধরনের লেগম (Legume) জাতীয় খাদ্য শস্য, যা Fabaceae পরিবার থেকে এসেছে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি Cicer arietinum নামে পরিচিত। ছোলা দুই প্রকারের একটি হল দেশীয় ছোলা যা আকারে 0.25-0.5 ইঞ্চির সামান্য কুঁচকানো ত্বক, শক্ত, গাঢ়-হালকা মাটির রঙের ও অসংখ্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ হয়ে থাকে এবং কাবলি ছোলা দেশীয় ছোলার চেয়ে আকারে বড়, মসৃণ ত্বক, নরম এবং হালকা ঘিয়ে রং এর হয়। এগুলি ভারত সহ আরো অন্যান্য দেশে বেশ ভালো মাত্রায় চাষ হয়ে থাকে। ছোলা গাছ ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, পাতাগুলো আকারে হালকা লম্বা-গোলাকার এবং বীজগুলো পাতলা খোসার মতো অংশ দ্বারা প্রতিটি ডালের গোড়ায় ঝুলে থাকে। 

ছোলা চাষের জন্য উষ্ণ জলবায়ু, ভালো নিকাশি মাটি ও কম জলের প্রয়োজন হয়ে থাকে, যা খুবই লাভজনক এবং এই ছোলা শুকিয়ে বহু বছর সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এগুলো কাঁচা, ভাজি, সিদ্ধ সহ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এর তৈরি ছোলার ছাতু এবং  ছোলার ডাল সব থেকে বেশি মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। দেশীয় ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এতে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি সহ আরো অসংখ্য পুষ্টি। দেশীয় ছোলা ভারতীয় খাবারে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় এবং কাবলি ছোলা মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিতে বিশেষ খাওয়া হয়ে থাকে। কাবলি ছোলা গুঁড়ো করে ব্যাসন তৈরি হয় যা দিয়ে ভারতীয় ঘরগুলোতে পকোড়া, পিঁয়াজি, বড়া অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার বানানো হয়। তবে দেশীয় ছোলা তার পুষ্টির জন্য সকালের জল খাবার থেকে শুরু করে রাতের খাবার অবধি একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা শক্তিশালী পুষ্টি উপাদান অতিরিক্ত কাজ করার শক্তি যোগায়, দ্রুত খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং এতে থাকা উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ ফাইবার শরীরকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে সহযোগিতা করে। 

chickpeas benefits

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলার পুষ্টি উপাদান। 

  • ক্যালোরি – 1580 kj 
  • প্রোটিন – 20.5 g 
  • ফ্যাট – 6.04 g 
  • কার্বোহাইড্রেট – 6.3 g 
  • ফাইবার – 12.2 g 
  • চিনি – 10.7 g 
  • ক্যালসিয়াম – 57 mg 
  • ম্যাগনেসিয়াম – 79 mg 
  • আয়রন – 4.31 mg 
  • ফসফরাস – 252 mg 
  • পটাশিয়াম – 718 mg 
  • জিংক – 2.76 mg 
  • ম্যাঙ্গানিজ – 4.15 mg 
  • ভিটামিন সি – 4 mg 
  • নিয়াসিন – 1.54 mg 
  • ভিটামিন বি6 – 0.535 mg 
  • ফোলেট – 557 ug 
cicer arietinum

শরীরের জন্য ছোলা খাওয়ার ৯ টি সুবিধা। 9 benefits of eating chickpeas for the body.

1. পেটের সমস্যা দূর: সর্বপ্রথম ছোলা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। এতে থাকা উচ্চ মাত্রায় ফাইবার হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও অনিয়মিত মলত্যাগ এর মত আরো অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং উচ্চ প্রোটিনের পরিমাণ খিদে নিয়ন্ত্রণ করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

৩. শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: গ্লাইসেমিক সূচক ছোলাতে স্বাভাবিকের তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশি কম থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের জন্য একটি ভালো খাবার হতে পারে। 

৪. দাঁত ও হাড়ের গঠন: শক্তিশালী ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁত মজবুত করে তোলে। 

৫. পেশির সঠিক কার্যকারিতা: এতে থাকা উদ্ভিদ ভিত্তিক উচ্চ প্রোটিন পেশির সঠিক কার্যকারিতায় সাহায্য করে।

৬. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ছোলা খেলে এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। 

৭. অন্ত্রের স্বাস্থ্য: এতে থাকা ফাইবার প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে বলে জানা যায়। এই প্রোবায়োটিক অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া প্রচার করে থাকে।  

৮. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

৯. হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি: এতে ভালো মাত্রায় আয়রন রয়েছে যার রক্তে হিমোগ্লোবিনের বৃদ্ধি করতে পারে।

chickpeas

ছোলা খাওয়ার কিছু সাময়িক সমস্যা। Some temporary problems of eating chickpeas.

১. পেটের সমস্যা: ছোলা খাওয়ার কারণে বিশেষ কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিংবা অসুবিধা হয় না, তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে ছোলা সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ এতে উচ্চ ফাইবার উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অসহ্য পেটে যন্ত্রণা, পেট ফোলা, গ্যাস এছাড়াও অন্ত্রে অস্বস্তির মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। 

2. অতিরিক্ত। ওজন বৃদ্ধি: এতে উচ্চ ক্যালরি থাকার কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

3. পুষ্টি ভারসাম্যহীনতা: উচ্চ পরিমাণ ছোলা খাওয়ার ফলে পুষ্টির সাময়িক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। 

ছোলা দ্বারা তৈরি কিছু রেসিপি। 

  1. কাঁচা ছোলা সালাদ 
  2. ছোলা ভুনা 
  3. ছোলার তরকারি 
  4. ছোলার ছাতু 
  5. ছোলা ভাজা 
  6. ছোলার ডালের বড়ার তরকারি 
  7. ছোলার ডালের বড়া ভাজা 
  8. ছোলার শাক ভাজা 
  9. ছোলার ডালের সন্দেশ 
  10. ছোলার ডালের হালুয়া 
  11. ছোলার ডালের বরফি 
  12. নিরামিষ ছোলার ডাল 
  13. ছোলার ডালের লুচি 
  14. ছোলার ডালের বরি 
  15. ছোলার ডালের লাড্ডু। 

এছাড়াও দেশীয় ছোলা এবং কাবলি ছোলা আরো অন্যান্য ভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *