নিয়মিত মুগ ডাল খাওয়ার ১০ টি স্বাস্থ্যগত গুনাগুন। 

মুগডাল ছোট সবুজ শাক জাতীয় একটি গাছ। এই গাছ Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত, যা বৈজ্ঞানিকভাবে (Vigna Radiata) নামে পরিচিত। এগুলি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে বিশেষ চাষ হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা শাক হিসেবে ও বীজ ডাল হিসেবে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এই বীজ গোলাকার- ডিম্বাকৃতি ও আয়তনের ৪-৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, বাইরের অংশ গাঢ় থেকে হালকা সবুজ, ভিতরের অংশ কাঁচা অবস্থায় সাদা থেকে হালকা ঘিয়া ও পরিপক্ক হওয়ার পর হালকা হলুদ রঙের হয় এবং এতে ছোট হলুদ রঙের ফুল হয়ে থাকে। 

এই মুগ ডাল হালকা মিষ্টি ও সুগন্ধি যুক্ত। এগুলি অঙ্কুরিত ভাবে বেশ মাত্রায় খাওয়া হয়ে থাকে, যা স্প্রাউট (Sprout) নামে পরিচিত। এই স্প্রাউট এবং মুগ ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মতো বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যা আমাদের স্বাস্থ্যকে আরো উন্নত করে তুলতে সাহায্য করে। 

Mung bean benefits

কাঁচা মুগ ডাল এর পুষ্টি উপাদান। Nutritional content of raw mung beans.

১০০ গ্রাম কাঁচা মুগ ডালের পুষ্টির পরিমাণ। 

  • ক্যালোরি: 1450 kj 
  • প্রোটিন: 23.9 g 
  • ফ্যাট: 1.15 g 
  • কার্বোহাইড্রেট: 62.6 g 
  • ফাইবার: 16.6 g 
  • চিনি: 6.6 g 
  • ক্যালসিয়াম: 132 mg 
  • আয়রন: 6.74 mg 
  • ম্যাগনেসিয়াম: 189 mg 
  • পটাশিয়াম: 1250 mg 
  • ফসফরাস: 367 mg 
  • ভিটামিন সি: 4.8 mg 
  • (B3) থায়ামিন: 0.621 mg 
  • (B2) নিয়াসিন: 2.25 mg 
  • B6: 0.382 mg 
  • ভিটামিন এ: 6 ug 
  • কোলিন: 97.9 mg 

নিয়মিত মুগ ডাল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা। 10 Benefits of Eating Mung Beans Regularly.

১. উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন: অঙ্কুরিত মুগ ডালের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন রয়েছে। যা সকালে জলখাবার কিংবা সন্ধ্যা বেলার খাবারের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর হতে পারে। 

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে: ওজন নিয়ন্ত্রণে এই ডাল বেশ উপকারী। এতে কম পরিমাণে ক্যালরি ও উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার রয়েছে যা পেটকে দীর্ঘসময়ের জন্য ভরাট রেখে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। 

৩. ফাইবার উপাদান: এতে থাকা  ফাইবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, গ্যাস, বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। 

৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের জন্য খুবই ভালো কাজ করে।  

৫. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: মুগ ডালে কোলেস্টেরলের মাত্রা না থাকায় এটি হার্টের সমস্যাযুক্ত রোগীদের জন্য একটি চমৎকার খাবার। এছাড়াও এটি LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) এর মাত্রা কমিয়ে HDL (ভালো কোলেস্টেরল) এ মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

৬. প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য: ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফেনোলিক এর মত আন্টি- অক্সিডেন্ট বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রদাহ কমায়, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগায় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। 

৭. ভিটামিন সি এর উপাদান: ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো অন্যান্য ভিটামিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, বলিরেখা ও দীর্ঘস্থায়ী কালো দাগ কমায় এবং অকালে ত্বক ঝুলে যাওয়া থেকে বাঁচায়। 

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এটা দেখা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

৯. হাড় ও দাঁত: ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর মতো শক্তিশালী খনিজ পদার্থ হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করে তোলে । 

১০. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস সহ বিভিন্ন খনিজ রক্তচাপ কমাতে এবং পেশী ও স্নায়ু ফাংশন সঠিক রাখতে সাহায্য করে। 

Sprouted mung beans

মুগ ডালের সম্ভাব্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some possible side effects of mung bean.

১. উচ্চ পরিমাণে ফাইবার: এতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার আছে যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বদ হজম, গ্যাস, পেট ফোলা, বমি বমি ভাব সহ ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। 

২. এলার্জির প্রতিক্রিয়া: এতে এলার্জির প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে চুলকানি, সারা শরীর লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকে জ্বালা ভাব, ফুসকুড়ি ও আরো অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। 

৩. শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: পরিমিত পরিমাণে মুগ ডাল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এই ডাল খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে যার কারণে ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের এই ডাল খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার। 

৪. কিডনিতে পাথর যুক্ত ব্যক্তিদের সমস্যা: মুগ ডালে থাকা অক্সালেট কিডনিতে পাথর যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

৫. টক্সিন উপাদান: ভালো ভাবে রান্না না হওয়া বা কাঁচা মুগ ডাল খেলে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি হতে পারে কারণ এতে টক্সিন থাকে। 

Mung bean

রান্নায় মুগ ডাল এর ব্যবহার। 

সবুজ মুগ ডাল দু-তিন দিন জল পালটে পালটে ভিজিয়ে রাখলে তাতে অঙ্কুর জন্ম নেয়। এই অঙ্কুরিত মুগ ডাল খুবই হাই প্রোটিন একটি স্যালাড যা সকালের জলখাবারকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এছাড়াও এই অঙ্কুরিত মুগ ডাল বিভিন্নভাবে ভাজা, তরকারি ও চচ্চড়ি করেও খাওয়া যেতে পারে।

মুগ ডাল রান্নায় ব্যবহার করার পাশাপাশি বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এই ডাল খুব কম মসলা ছাড়াই রান্না হয় যার কারণে এর সমস্ত পুষ্টি উপাদান আপনি গ্রহণ করতে পারেন। 

মুগ ডালের তৈরি কিছু রেসিপি—

মুগ ডালের বড়া, জিলাপি, খিচুড়ি, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, পিঠে, লুচি, মুড়িঘন্ট, পাটিসাপটা, মুগডাল ভাজা, ঝিঙে লাউ দিয়ে মুগ ডাল, মিক্স ভেজিটেবিল মুগ ডাল, মুগ ডালের হালুয়া, লাড্ডু। এছাড়াও আরো বিভিন্ন খাবারের এই মুগ ডাল এর ব্যবহার হয়ে থাকে। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *