কেন পুঁইশাক আপনার খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। Malabar spinach 

পুঁইশাক Basellaceae পরিবারের এক প্রকার লতা জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Basella alba। এই শাক ভারত, বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বেশ ভালো মাত্রায় চাষ হয়ে থাকে। পুঁইশাকের পাতা ও ডাটা সার হিসেবে খাওয়া হয় এবং ফলগুলোও রান্না করে খাওয়া হয় যা সাধারণত পুঁই মেটুলি নামে পরিচিত। 

এই উদ্ভিদ দেখতে সাধারণত লতানো ও ১০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়, পাতাগুলো হালকা গোল-ডিম্বাকৃতি, হালকা সাদা-লাল,ফুল, লম্বা ডাল এবং গাঢ় কালো-বেগুনি রঙের ফল যুক্ত হয়ে থাকে। 

এতে রয়েছে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ভিটামিন বি6, ভিটামিন এ, ফোলেট, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। এই সবকটি পুষ্টি একত্রে আমাদের স্বাস্থ্যকে আরো উন্নত করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুঁইশাক ভরপুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি বিভিন্ন ঐতিহ্যগত ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়ে আসছে। 

Malabar spinach

পুঁই শাকের পুষ্টি উপাদান। Nutrient content of Malabar spinach. 

রান্না করা প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁইশাক এর পুষ্টি উপাদান —

  • জলের পরিমাণ: 92.5 g 
  • ক্যালরি: 23 kcal 
  • প্রোটিন: 2.98 g 
  • ফ্যাট: 0.78 g 
  • কার্বোহাইড্রেট: 2.71 g 
  • ফাইবার: 2.1 g 
  • সোডিয়াম: 124 mg 
  • আয়রন: 1.48 mg 
  • ম্যাগনেসিয়াম: 48 mg 
  • পটাশিয়াম: 256 mg 
  • ফসফরাস: 36 mg 
  • সোডিয়াম: 55 mg 
  • ভিটামিন সি: 5.9 mg 
  • ভিটামিন বি6: 0.086 mg 
  • ভিটামিন এ: 58 ug 
  • ফোলেট: 114 ug 
Malabar spinach benefits

পুঁইশাক আপনার খাদ্য তালিকায় থাকার ১০ টি  কারণ। 10 Reasons Why Malabar spinach should Be in Your Diet.

১. ভিটামিন সি এর উপকার:পুঁইশাক ভালো মাত্রায় ভিটামিন সি প্রদান করে। এই ভিটামিন খুবই ভালো এবং শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় করে, ইউনিয়ন ফাংশন সঠিক রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুলের যত্নে সাহায্য করে। 

২. চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি: ভিটামিন এ এই শাকের একটি শক্তিশালী উৎস যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

৩. হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য: ভিটামিন কে হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্ত জমাট হওয়া থেকে বাধা দেয়। 

৪. ফাইবার উপাদান: এতে থাকা ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগের সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। 

৫. কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য: সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান হার্টের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এগুলো রক্তচাপ কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হার্ট ব্লকেজ এর মতো সমস্যা থেকে বাঁচায়। 

৬. হৃদরোগ প্রতিরোধে: এতে রয়েছে শক্তিশালী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি কমায়।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ: কম ক্যালরি এবং উচ্চ মাত্রায় থাকা ফাইবার যুক্ত পুঁইশাক শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ লাভজনক। 

৮. উচ্চ জলের উপাদান: এই শাকের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ জলের পরিমাণ রয়েছে। এই জল শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা রাখে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমায় এবং দেহে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে।

৯. ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার: বিভিন্ন ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে এই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন – উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের কোষের পুনর্জন্ম ও পেটের বিভিন্ন রোগ নিরাময়। 

১০. রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি: এতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

Malabar spinach cooking

পুঁইশাক রান্নায় ব্যবহার।  

পুঁইশাক যেমন উপকারী ঠিক তেমনি সুস্বাদু এই স্বাদ বিভিন্ন ভাবে রান্না করে তার উপকারিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।

জেনে নিন পুঁইশাকের কিছু সুস্বাদু রেসিপি। 

পুঁই পাতার সালাদ, স্যুপ, চচ্চড়ি, মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক, কুমড়ো দিয়ে পুঁইশাক, ডাটা চচ্চড়ি, যেকোনো মাছ দিয়ে পুঁইশাক চচ্চড়ি, মুসুর ডাল দিয়ে পুঁইশাক, চিংড়ি মাছ দিয়ে পুঁইশাক, পুঁই পোস্ত, পুঁইশাক ঘন্টা, পুঁইশাক নিরামিষ সবজি, পুঁই মেটুলি চচ্চড়ি, আলু দিয়ে তরকারি, পুঁই শাকের বড়া, পাতা ভাজা, সরষে বাটা দিয়ে পুঁই শাকের ঝাল, বড়ি দিয়ে পুঁইশাক চচ্চড়ি, পুঁই পাতার ভর্তা, ঝিঙে দিয়ে পুঁইশাক চচ্চড়ি। 

পুঁইশাক খাওয়ার সম্ভাব্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। 

পুঁইশাক খাওয়ার বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি এলার্জি, গ্যাস ও কিডনিতে পাথর যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। 

১. পেটের সমস্যা: পুঁইশাক বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ খাবার তবে উচ্চমাত্রায় ঠিক খাওয়ার কারণে গ্যাস, পেট ফোলা, পেটে হালকা থেকে ভারী মাত্রায় ব্যথা, ডায়রিয়া ও হজমের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

২. কিডনিতে পাথর যুক্ত ব্যক্তিদের সমস্যা: যেসব ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর আছে কিংবা এমন কোন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই পুঁইশাক খাওয়া খুবই বিপদজনক হতে পারে, কারণ এতে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট রয়েছে। যেকোন উচ্চ অক্সালেট যুক্ত খাবার খাওয়া কিডনিতে পাথর যুক্ত রোগীদের সমস্যা আরও দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। 

৩. ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: রক্তের সমস্যা আছে কিংবা রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ খাচ্ছেন এমন কোন ব্যক্তি এই শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। কারণ এটি রক্ত পাতলা হওয়ার ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। 

৪. এলার্জির সম্ভাবনা: পুঁইশাক এলার্জির কারণ হতে পারে। যদি আপনার আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তবে পুঁই শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। কারণ এটি শ্বাসকষ্ট, মুখে লাল ভাব, চোখ সহ গোটা শরীর ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *