গোটা পৃথিবীতে এমন অনেক ফল রয়েছে যা আমাদের শরীরে থাকা বিশেষ কিছু অংশের মতো দেখতে হয়ে থাকে। তার মধ্যেই কাজু বাদাম একটি অন্যতম যার, আকৃতি একদম কিডনির মতো। এই কাজু বাদামের বাইরের অংশটা ফল হিসেবে এবং তার ঠিক পিছনের দিকে জন্মানো ছোট্ট বীজটিকে বাদাম হিসেবে খাওয়া হয়। কাজু বাদামের সামান্য মিষ্টি স্বাদ এবং হালকা মাখনের মতো গন্ধ হয়ে থাকে।
এই কাজু বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, প্রোটিন ও খনিজ রয়েছে।
কাজু গাছ (Anacardium occidentale) একটি গ্রীষ্মকালীন চিরহরিৎ গাছ। এটি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের স্থানীয়, তবে ভারত, নাইজেরিয়া এবং ভিয়েতনাম সহ বেশ কয়েকটি দেশে এর চাষ করা হয়ে থাকে। একটি মাঝারি আকারের কাজু গাছ উচ্চতায় প্রায় ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই গাছের পাতাগুলি সবুজ চামড়া যুক্ত-উপবৃত্তাকার আকৃতির এবং পাঁচটি পাপড়ি যুক্ত ছোট সুগন্ধি, ফ্যাকাসে-সবুজ রঙের হয়ে থাকে। কাজু গাছের ফল গুলো প্রায়ই লাল বা হলুদ রঙের হয়, ভিতরের অংশ রসালো ও মিষ্টি স্বাদের।
কাজু বাদাম সারা বিশ্বে খুবই বিখ্যাত, কারণ এটি রান্না সহ স্নাক্স হিসেবেও ব্যবহার করা হয় এবং এর ফলটিও তাজা অবস্থায়, জুস, জ্যাম, চাটনি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে কাজু বাদামটি উরুশিওল নামক একটি বিষাক্ত খোসা দ্বারা বেষ্টিত থাকে। এটি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে তবেই গ্রহণ করা উচিত।
কাজুর সম্পূর্ণ পুষ্টির তথ্য। Complete nutritional information of cashew.
এক আউন্স (২৮ গ্রাম) কাঁচা কাজুর আনুমানিক পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালরি: 157 কিলোক্যালরি
- প্রোটিন: 5 গ্রাম
- চর্বি: 12 গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড: 8 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 9 গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার: 1 গ্রাম
- চিনি: 2 গ্রাম
ভিটামিন
- Vitamin K: 9.5 মাইক্রোগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 12% -DV)
- Vitamin E: 0.3 মাইক্রোগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 2%- DV)
- Vitamin B1: 0.1 মিলিগ্রাম
- Vitamin B3: 0.3 মিলিগ্রাম
- Vitamin B5: 0.2 মিলিগ্রাম
- Vitamin B6: 0.1 মিলিগ্রাম
- ফোলেট (B9): 6 মাইক্রোগ্রাম
খনিজ
- ক্যালসিয়াম: 10 মিলিগ্রাম (1%-DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: 83 মিলিগ্রাম (20%-DV)
- ফসফরাস: 167 মিলিগ্রাম (13%-DV)
- আয়রন: 1.9 মিলিগ্রাম (10%-DV)
- পটাশিয়াম: 187 মিলিগ্রাম (4%-DV)
- তামা: 0.6 মিলিগ্রাম (67%-DV)
- ম্যাঙ্গানিজ: 0.5 মিলিগ্রাম (23%-DV)
কাজু বাদামের সম্পূর্ণ উপকারিতা। Complete benefits of cashew.
পুষ্টিগুণ উপাদান: কাজুতে প্রোটিন, চর্বি (মনোস্যাচুরেটেড, পলিআনস্যাচুরেটেড), ভিটামিন (Vitamin B, E, K) ও খনিজ (ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, তামা) সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে: কাজু বাদামের মধ্যে বেশ ভালো পরিমাণে ক্যালরি হওয়ার সত্বেও এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী হতে পারে। স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন গুলির সংমিশ্রণ শরীরকে একটি তৃপ্তির অনুভূতি জাগায়।
হার্টের স্বাস্থ্য: কাজুতে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (LDL) কোলেস্টেরল কমাতে ও হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এবং HDL কলেস্টরলের মাত্রা বজায় রাখতে বা বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ অবদান রাখে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি: এই বাদাম ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মতো ভালো খনিজ রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাড়কে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে কাজুবাদাম একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে: কাজু বাদাম সহ যে কোন বাদাম খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেন। স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং ফাইবার এর উপাদান ভালো গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখে।
ত্বকের সুরক্ষা: কাজুতে পাওয়া কপার মেলানিন এর উপাদানের জন্য চুল ও ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
চোখের স্বাস্থ্য: লুটেইন এবং জেক্সানথিন এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে এটি বিশেষ সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: কাজু বাদামে আয়রনের একটি ভালো উৎস রয়েছে। আয়রন অভাবজনিত রক্তল্পতা প্রতিরোধের জন্য খুবই কার্যকরী।
কাজু খাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। Some precautions must be taken before consuming cashews.
এলার্জির সম্ভাবনা: কাজু বাদাম সহ বেশ কিছু বাদামে এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তিদের কোন বাদামের প্রতি এলার্জির প্রতিক্রিয়া আছে তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার।
অক্সালেট: কাজু সহ অন্যান্য বেশ কিছু বাদামে অক্সালেট থাকে। উচ্চ অক্সালেট গ্রহণ কিছু ব্যক্তির কিডনিতে পাথর গঠনে বিশেষ অবদান রাখতে পারে এবং যাদের কিডনিতে পাথরের মতো সমস্যা রয়েছে তাদের অক্সালেট জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে সীমিত থাকা দরকার।
উচ্চ ক্যালরি ঘনত্ব: কাজুতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি। যদিও চর্বিযুক্ত ক্যালরি স্বাস্থ্যকর, তবে অত্যাধিক গ্রহণের ফলে এটি ওজন বৃদ্ধি দিকে পরিচালিত হতে পারে।
ছত্রাক দূষণ: কাজু ছত্রাক দূষণের জন্য সংবেদনশীল হতে পারে যেটি মাইকোটক্সিন তৈরি করে। ছত্রাকে দূষণ কমাতে এটি ভালো করে প্রক্রিয়াকরণ করে এয়ারটাইট কৌটার মধ্যে স্টোর করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নির্দিষ্ট ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: কাজুতে থাকা ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধার থেকে সাহায্য করে। যদি কোন ব্যক্তি রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করে থাকে তাহলে তাদের ভিটামিন K জাতীয় খাবার খুবই কম পরিমাণে কিংবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই গ্রহণ করা দরকার।