কাঠ বাদাম (Terminalia catappa) গাছ একটি পর্ণমোচী গাছ, যা তার মিষ্টি স্বাদযুক্ত বাদামের জন্য চাষ করা হয়ে থাকে। ইরান ও উপযুক্ত জলবায়ু সহ বিশ্বের অনেক জায়গায় এই বাদাম গাছের চাষ হয়ে থাকে। এটি Rosaceae পরিবারের অন্তর্গত। একটি মাঝারি আকারের কাঠবাদাম গাছ প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এই গাছের সব থেকে আকর্ষণীয় জিনিস হলো সাদা বা গোলাপি ফুল, যা বসন্তের শুরুতে পাতা ফোটার আগে ফুটে থাকে এবং পাতাগুলি কিছুটা দাগ যুক্ত, লম্বাটে আকৃতির হয়। বাদাম গাছের ফল হিসেবে আমরা যেদিকে গ্রহণ করে থাকি সেটি আসলে বাদামের খোলসের ভিতরে থাকা বীজ। এই বাদামের মিষ্টি এবং তিক্ত দুই ধরনের জাত রয়েছে।
কাঠ বাদাম খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে, যা সুস্থ মস্তিষ্ক ও স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের পুষ্টি উপাদান। 100 grams Nutrient content of Almonds.
- ক্যালোরি: 576 কিলোক্যালরি
- জলের পরিমাণ: 4%
- প্রোটিন: 21.2 গ্রাম
- মোট চর্বি: 49.4 গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: 3.7 গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 30.9 গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 12.3 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 21.7 গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 12.5 গ্রাম
- চিনি: 3.9 গ্রাম
- ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: 0.0 গ্রাম
- ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড: 12.3 গ্রাম
ভিটামিন
- ভিটামিন E: 25.6 গ্রাম (দৈহিক মূল্যের 128%)
- ভিটামিন B2:1.0 গ্রাম (দৈহিক মূল্যের 60%)
- ভিটামিন B3: 3.4 গ্রাম (দৈহিক মূল্যের 17%)
- ভিটামিন B6: 0.1 গ্রাম (দৈহিক মূল্যের 6%)
খনিজ
- ক্যালসিয়াম: 264 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 26%)
- ম্যাগনেসিয়াম: 268 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 67%)
- আয়রন: 3.7 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 21%)
- ফসফরাস: 481 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 48%)
- পটাশিয়াম: 733 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 21%)
- তামা: 1.0 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 50%)
- ম্যাঙ্গানিজ: 2.3 মিলিগ্রাম (দৈহিক মূল্যের 144%)
- ফাইটোকেমিক্যাল অ্যাসিড: 1.5 গ্রাম
কাঠ বাদামের ১৩ টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা। 13 Important Benefits of Almonds.
১. পুষ্টির ঘনত্ব: কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, খাদ্যতালিকাগত ফাইবার, ভিটামিন E, B2, B3 ও ম্যাগনেসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ ক্যালসিয়াম ফসফরাস সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর।
২. সুস্থ হার্ট: কাঠবাদাম মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দ্বারা বেষ্টিত, যা কাটোয়া স্কুলের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত হয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. প্রোটিনের উৎস: এই বাদাম উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা সন্তুষ্টি জনক এবং পুষ্টিকর জলখাবার বা কোনো নির্দিষ্ট খাবারের সাথে যোগ করে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
৪. ফাইবারের উপাদান: এতে উচ্চ ফাইবারের উপাদান রয়েছে যা হজম ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫. ভিটামিন E: কাঠ বাদামে ভিটামিন E একটি অন্যতম সেরা খাদ্যতালিকাগত উৎস। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে উন্নত করতে এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৬. খনিজ উপাদান: এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ সহ বিভিন্ন খনিজ সরবরাহ করে, যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ: বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার এবং প্রোটিন একত্রে মিলিত হয় রক্তে শর্করার মাত্রা আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস যুক্ত রোগীদের জন্য খুবই উপযুক্ত।
৮. ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে ক্যালরির ঘনত্ব বেশি হওয়ার সত্ত্বেও বেশ তৃপ্তিদায়ক, যার কারণে এটি সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ সহায়তা করে।
৯. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে: নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত হতে থাকে, বিশেষ করে এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রার পরিমাণ কমে যায়।
১০. হাড়ের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস এর মতো খনিজ এতে উপস্থিত রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ অবদান রাখে।
১১. মস্তিষ্কের বিকাশ: অন্যান্য বাদামের চাইতে কাঠ বাদামে ভিটামিন E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি জ্ঞানীয় কার্যকারিতায় বিশেষ সমর্থন করে এবং মস্তিষ্ককে বয়স সম্পর্কিত রোগ থেকে রক্ষা করে আরো উন্নত করে তোলে।
১২. মেজাজ নিয়ন্ত্রণ: এতে ম্যাগনেসিয়াম বেশ ভালো পরিমাণে রয়েছে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং উদ্বেগ কমায়।
১৩. প্রোবায়োটিক বৈশিষ্ট্য: বাদামে থাকা ফাইবার একটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির প্রচার করে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। Almonds are nutritious for health, but they have some side effects.
কালোরের ঘনত্ব: কাঠবাদামে ক্যালরির ঘনত্ব বেশি এবং এটি প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
গ্যাস সহ অন্যান্য সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণে এই বাদাম খাওয়ার ফলে কিছু ব্যক্তির গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন গ্যাস, ডায়রিয়া, পেট ফোলা, বমি- বমি ভাব সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অক্সালেট: বাদামের মধ্যে অক্সালেট রয়েছে, যা উচ্চ গ্রহণের ফলে ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির আগে থেকেই কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো সমস্যা থেকে থাকে তবে তাদের অক্সালেট যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার।
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: চিনা বাদামের তুলনায় কাঠ বাদামে তুলনামূলকভাবে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তবে কিছু ব্যক্তির এটি খাওয়ার পর চুলকানি, শ্বাসকষ্ট সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে তবে অবশ্যই তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি গ্রহণ করা উচিত।
অ্যান্টি নিউট্রিয়েন্ট: কিছু খাবারের মতো কাঠবাদামেও ফাইটিক অ্যাসিড এর মতো অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যা খনিজ গুলোকে আবদ্ধ করতে সাহায্য করে। এমনিতে এটি সুষম খাদ্যের ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ভয় এর বিষয় নয়। তবে পরিমাণ মেপে এই বাদাম খাওয়া উচিত।