সেন্টেলা এশিয়াটিকা (Centella Asiatica) ভারতীয় পেনিওয়ার্ট, গোটু কোলা ও থানকুনি নামে পরিচিত। এটি অ্যাপিয়াসি (Apiaceae) পরিবারের অন্তর্গত, যা একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। এবং এটি বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়, ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা, মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা ও শারীরিক স্বাস্থ্য উপকারিতায় ব্যবহার করা হয়। এই বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ তার পাতার জন্য বিশেষ ব্যবহার হয়ে থাকে, যা দেখতে কিছুটা গোলাকার পাখার আকৃতির এবং গাঢ় সবুজ রঙের হয়, নিচের ডাল পাতলা ডগের মতো হয়ে মাটির নিচের দিকে থাকে ও ছোট ফ্যাকাশে সাদা ও গোলাপি রঙের ফুল যুক্ত হয়ে থাকে।
থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য। Properties of Centella asiatica leaves.
১. স্মৃতিশক্তি ও স্নায়ুর কার্যকারিতায় সাহায্য করে।
২. মস্তিষ্কের কোষ কে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
৩. মানসিক ও শারীরিক উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে ।
৪. এশিয়াটিক অ্যাসিড, মেডেক্যাসোসাইড ও এশিয়াটিকোসাইড নামক জৈব বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে পারে।
৫. অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট কোলাজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে তোলে।
৬. শরীরে থাকা সমস্ত শিরাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।
৭. এই পাতার নির্যাস দীর্ঘায়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
ত্বকের উপকারে থানকুনি পাতা। Benefits of Centella asiatica leaves for skin.
১. এই পাতা কোলাজের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে, ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় করে, বিভিন্ন কাটা, পোড়া ও ব্রণের দাগ সরিয়ে ফেলে, ফুসকুড়ি, ফোড়া এবং একজিমা দূর করে ত্বককে মেরামত করতে সাহায্য করে।
২. এতে থাকা অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য ত্বকের বলিরেখা দূর করে ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।
৩. এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য একজিমা ও ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের আদ্রতা বজায় রেখে ত্বক ডিহাইড্রেড হওয়া থেকে বাঁচায়।
৫. এই পাতা পায়ে, ঘাড়ে ও কোমরে হওয়া স্ট্রেচ মার্ক দূর করে ও চামড়া মসৃণ করে তোলে।
৬. ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন, গাঢ় দাগ কমিয়ে ত্বক সমান করতে ও উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
থানকুনি পাতা ব্যবহারের নিয়ম। Rules for using Centella asiatica leaves.
১. থানকুনি পাতা সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করার জন্য এর তৈরি ক্রিম, জেল ও তেল সহ আরো অন্যান্য পণ্য বাজারে পাওয়া গিয়ে থাকে, যা ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এই পাতার রস ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বক হাইড্রেট থাকবে।
৩. কয়েকটি তাজা থানকুনি পাতা সামান্য জল দিয়ে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করে তা কেটে যাওয়া বা পুরনো কোন কালো দাগ এর মধ্যে লাগালে দ্রুত তা সেরে যায়।
৪. এই পাতার তেল সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করলে এটি ত্বকের সুস্থতা কমিয়ে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
৫. কয়েকটি তাজা থানকুনি পাতা গরম জলে ফুটিয়ে তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে সকাল কিংবা সন্ধ্যেবেলা খাওয়া যেতে পারে। এটি শারীরিক ও মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
৬. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৮ থেকে ১০ টি কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে নিয়মিত মলত্যাগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য ঠিক করে এবং পেটের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।