সবেদা বা সফেদা একটি চিরহরিৎ গাছ, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে মানিলকারা জাপোটা নামে পরিচিত এবং Sapotaceae পরিবারের অন্তর্গত। এটি মেক্সিকো, ক্যারিবিয়ান, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়ার কিছু অংশের স্থানীয়। এছাড়াও এটি সারা বিশ্বে গ্রীষ্মকালীন ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে থাকে। এই গাছ মাঝারি থেকে বেশ বড় আকারের হয়ে থাকে, উচ্চতায় এটি ৩০ মিটার (প্রায় ১০০ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পাতাগুলি গাঢ় সবুজ, হালকা লম্বাটে ও ছোট ক্রিম অর্থাৎ ঘিয়া রঙের ফুল উৎপন্ন করে। সবেদা গাছের এই ফলকে চিকু নামেও চেনা যায়। এই ফলটি গোলাকার বা ডিম্বাকার আকৃতির হয়, বাইরের ত্বক বাদামী এবং ভেতরের অংশ হালকা বিস্কুট রঙের, তবে কিছু জাতের উপর নির্ভর করে ভিতরের অংশ লাল রঙের হয়ে থাকে। স্বাদে ও গন্ধে এই ফল এক কথায় অতুলনীয়, ভিতরের অংশের স্বাদ চিনির মতো মিষ্টি এবং হালকা সুগন্ধযুক্ত।
সবেদা গাছের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো ল্যাটেক্সের উপস্থিতি। ল্যাটেক্স হল একটি আঠালো, সাদা রঙের রস, যা থেকে ঐতিহ্যগতভাবে চুইংগাম তৈরি করা হয়। এই ফল ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ডায়েটারি ফাইবার, ফোলেট ও খনিজ সহ বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর।
সবেদা ফলের পুষ্টি উপাদানগুলি নির্দিষ্ট জাত এবং পেকে যাওয়ার উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
১০০ গ্রাম সবেদার আনুমানিক পুষ্টি উপাদান—
- জলের পরিমাণ: 80%
- ক্যালরি: 83
- প্রোটিন: 0.44 গ্রাম
- চর্বি: 1.0 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 19.96 গ্রাম
- চিনি: 14.44 গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 5.3 গ্রাম
- ভিটামিন সি: 14.7 মিলিগ্রাম (25%)
- ভিটামিন ই: 0.2 মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন: 0.2 মিলিগ্রাম
- ফোলেট: 14 এমসিজি
- পটাশিয়াম: 193 মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: 21 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: 12 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: 12 মিলিগ্রাম
স্বাস্থ্যের জন্য সবেদার সঠিক উপকারিতা। The exact benefits of Sapodilla for health.
ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ: সবেদা, যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ফোলেট, নিয়াসিন সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি। এই পুষ্টি গুলি সুস্থ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বকের স্বাস্থ্য সমর্থন সহ আরো অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ এর সাথে যুক্ত। এছাড়াও রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার যা হজমের সমস্যা ঠিক করতে সাহায্য করে, ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সঠিক রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও এটি বিশেষ অবদান রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: এই ফলে পলিফেনল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলো নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শক্তির বৃদ্ধি: এই ফলে উপস্থিত প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, এটি একটি উপযুক্ত জল খাবার বা খাবারের সাথে যোগ করে খাওয়ার জন্য ফল, যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এর সাথে নিযুক্ত করা একটি ভালো অভ্যাস হতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য সমর্থন: এতে থাকা খাদ্যতালিকাগত ফাইবার এবং পটাশিয়ামের উপাদান হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হাইড্রেশন: সবেদাতে উচ্চ জলের পরিমাণ রয়েছে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে ও বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য শরীরকে অনেক বেশিক্ষনের জন্য হাইড্রেটেড রাখতে পারে।
যদিও সবে তাহা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো একটি ফল তবুও এটি খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
সবেদা খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। Some precautions should be taken before consuming Sapodilla.
ল্যাটেক্স এলার্জি: সবেদা গাছের (ল্যাটেক্স) সাদা রস কিছু ব্যক্তির শরীরে এলার্জির সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে চুলকানি, গা-হাত ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট সহ আরো অন্যান্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে এই ফল খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
দাঁতের সমস্যা: এই ফলে প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে, যার কারণে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে দাঁতের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: কিছু সময় অত্যাধিক পরিমাণে সবেদা ফল খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, পেটে অসহ্য পরিমাণ ব্যথা কিংবা অস্বস্তির সৃষ্টি হতে পারে।
উচ্চ ক্যালরি ঘনত্ব: এই ফলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি। যেসব ব্যক্তিরা তাদের ক্যালোরি গ্রহণের দিকে বিশেষ নজর রাখছেন, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের মত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এটি খাওয়ার আগে সচেতন হওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো: সবেদা গর্ভবতী এবং দুগ্ধ পান করানো মহিলাদের জন্য সাধারণত নিরাপদ যখন সেটা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া হবে। তবে এটি একটি ব্যক্তির খাদ্যতালিকাগত চাহিদার সাথে ভালোভাবে ফিট করে তা নিশ্চিত করার জন্য একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাওয়া ভালো।