তিল বীজ আকারে খুব ক্ষুদ্র। এই তিল বীজ তেল সমৃদ্ধ, যা সেসামুম ইন্ডিকাম উদ্ভিদ থেকে এসেছে। এগুলি প্রায় হাজারো বছর ধরে ব্যাপক পরিমাণে চাষ হয়ে আসছে এবং বিভিন্ন রন্ধন সম্পর্কীয় ও ঔষধি প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিল বীজ সাদা, কালো ও বাদামি সহ বিভিন্ন জাতের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তবে সব থেকে বেশি পুষ্টিতে ভরপুর সাদা তিল। প্রতিটি বীজের নিজস্ব স্বাদ এবং গন্ধ রয়েছে।
সব থেকে পুষ্টিকর বীজের মধ্যে তিল একটি অন্যতম। তিলের মধ্যে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি (মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড), ফাইবার, ভিটামিন ( B1, B6) ও খনিজ (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন) রয়েছে। তিলের বীজের মধ্যে শেষ আমল এবং সেজামির নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যেগুলি কোচকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এই বীজ দ্বারা তৈরি তেল বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধি জন্য ব্যবহার করা হয়।
এই তিল বীজ থেকে এক ধরনের তেল বের হয়, যা তিলের তেল নামে পরিচিত। এটি বিভিন্ন রান্নায় খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও তিলের বীজকে পেস্ট বানিয়ে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বহু পুরনো সময় থেকে এই তিলের বীজ খাবারের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন রুটি, কুকিজ ও চাইনিজ ডিস এর ওপর গার্নিশিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তিল বীজের পুষ্টি উপাদান (Nutritions)।
1 গ্রাম তিল বীজের ভগ্নাংশীয় পুষ্টির মান।
- ক্যালোরি: 5-6 ক্যালোরি
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: 0.4-0.5 গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: 0.06-0.07 গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 0.14-0.17 গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 0.2-0.25 গ্রাম
- প্রোটিন: 0.2 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 0.3-0.4 গ্রাম
- ফাইবার: 0.2 গ্রাম
- চিনি: 0.1 গ্রাম
ভিটামিন ও খনিজ
- থায়ামিন (B1): 0.004-0.005 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন (B6): 0.003-0.004 মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: 10-11 মিলিগ্রাম
- আয়রন: 0.1 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: 3-4 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: 6-7 মিলিগ্রাম
তিল খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। Some Health Benefits of Eating Sesame.
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: তিলের বীজে থাকা সেসামিনল এবং সেসামল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি: এই তিল বীজে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম উপাদান রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। শক্তিশালী এবং সুস্থ গাঢ় বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা দরকার এবং এই ক্যালসিয়াম তিল বীজের মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে উপস্থিত থাকে এটি আপনার ডায়েটে যুক্ত করে খুব সহজেই ক্যালসিয়ামের অভাব মেটাতে পারেন।
হজমে সহায়তা: তিলের বীজ খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের একটি ভালো উৎস, যা মলত্যাগে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেটকে ভালো রাখে।
ত্বকের যত্ন: এই বীজে জিংক এর উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্যের বিশেষ অবদান রাখে এবং ক্ষত নিরাময় ও স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখার জন্য এটি খুবই কার্যকর।
হরমোন নিয়ন্ত্রণ: তিলের বীজের মধ্যে লিগনান নামক একটি যৌগ রয়েছে, যা ইস্ট্রোজেনের মতন প্রভাব ফেলতে পারে। এই যৌগগুলি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, বিশেষ করে পোস্টমেনোপজাল। যেসব মহিলাদের পিসিওডি (PCOD) কিংবা পিসিওএস (PCOS) আছে তাদের ক্ষেত্রে এই তিলের বীজ খুবই উপকারী।
হৃদয় স্বাস্থ্য উন্নতি: তিলের বীজে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তিলের বীজে থাকা দুটি উপকারী যৌগ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: বেশ কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, তিলের বীজ রক্তে সরকারের মাত্রা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে এই বেঁচে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন এর উপাদান শর্করার মাত্রাকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: তিলের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এর উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের বিশেষ অবদান রাখে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ: তিল উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিনের সবথেকে ভালো উৎস, এগুলি নিরামিষ খাবারে একটি মূল্যবান সংযোগ করে তোলে।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধ: এই বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, আয়রন শরীরের অভাবজনিত রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিলের বীজের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some Side Effects of Sesame.
এলার্জির সম্ভাবনা: তিল বীজ থেকে এলার্জির সম্ভাবনা খুব একটা স্বাভাবিক নয়, তবে বেশ কিছু মানুষের হালকা চুলকানি, আমবাত কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির এই উপসর্গগুলি গুরুতর হয়ে যায় তবে তৎক্ষণাৎ এটি খাওয়া বন্ধ করে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
অক্সালেট: যে সব ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের তিলের বীজ থেকে বিরত থাকা দরকার। কারণ তিলের বীজে অক্সলেট নামক যৌগ রয়েছে, যা কিডনিতে পাথরের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি: এই বীজ খুবই পুষ্টিকর এবং এতে বেশ ভালো পরিমাণে ক্যালরির ঘনত্ব রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে তিলের বীজ খাওয়ার ফলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
হজমের সমস্যা: এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে কিছুটা হজমের সমস্যা হতে পারে। তবে খুব বেশি তিল খাওয়া, বিশেষ করে যদি উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া কোন ব্যক্তি অভ্যাস না থাকে, তবে সেসব ব্যক্তির হজমে অস্বস্তি, গ্যাস কিংবা পেট ফোলা ভাবের মতো সমস্যা হতে পারে।
ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: তিল বীজ নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তিলের বীজের মধ্যে অল্প পরিমাণ ভিটামিন k রয়েছে যা রক্ত পাতলা করার ওষুধে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের ওষুধ গ্রহণ করে থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এটি খাওয়া করা দরকার।