সর্দি-কাশি ও যক্ষা রোগের যম এই বাসক পাতা। Justicia Adhatoda  

বাসক গাছ ভারতের অতি ব্যবহারকারী একটি গাছ। তবে এই গাছের পাতা, ফুল, ফল, বাকল সহ সমস্ত কিছুই বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাসক গাছ Acanthaceae পরিবারের অন্তর্গত, এর বৈজ্ঞানিক নাম জাস্টিসিয়া আধাটোদা (Justicia Adhatoda)। এছাড়াও এই গাছের আরো বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন ভাসাকা, মালাবার বাদাম, আধাটোদা, আদাথোদাই, আদুসা এবং চলতি ভাষায় বাসক পাতা গাছ বলা হয়। এটি ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা সহ আরো অন্যান্য ভারতের উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ সাধারণত ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পাতাগুলো ল্যান্ডস্কেপ আকৃতির হালকা চ্যাপ্টা ও লম্বা হয় যা হালকা তেতো স্বাদের হয়ে থাকে। এই গাছে ছোট হালকা সাদা থেকে ফ্যাকাশে বেগুনি রঙের ফুল এবং ছোট ক্যাপসুল আকারের খোসার ভিতরে থাকা বীজ পেকে যাওয়ার পর ফেটে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পুনরায় গাছ উৎপন্ন করে থাকে। 

justicia adhatoda

বাসক পাতার আয়ুর্বেদিক বৈশিষ্ট্য। Ayurvedic Properties of Basak Leaf.

1. বাসক পাতা শ্বাসনালী থেকে কফ এবং শ্লেষ্মা কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।  

2. এটি বক্সাইটিসের মতো রোগের বিরোধী লড়াই করতে পারে। 

3. অ্যাজমা ও হাঁপানি রোগীদের জন্য এই পাতা মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এটি হাঁপানি রোগ কমিয়ে সঠিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে। 

4. যক্ষা এমন একটি রোগ যার কারণে সারা বিশ্বে বহু মানুষ মারা গিয়ে থাকে। এই পাতার রস যক্ষ্মা রোগের জন্য একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

5. সাধারণ জ্বর বা ভাইরাল ফ্লু কমাতে এই পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য সাহায্য করে থাকে। 

6. গলায় ব্যথা, অনবরত কাশি ও দীর্ঘদিন ধরে হওয়া জ্বর কমাতে এই পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

7. এই পাতা তার তিতা স্বাদের কারণে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বার করে ফেলতে পারে। 

8. এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। 

9. ফ্লাভোনয়েড নামক যৌগ দ্বারা সমৃদ্ধ বাসক পাতা শরীরকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে অক্সিডেন্ট স্ট্রেস এর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। 

10. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য পুরনো যেকোনো ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাতের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস এর মতো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 

vasaka leaves benefits

বাসক পাতা ব্যবহারের নিয়ম। Rules for using Basak Leaf.

বাসক পাতা বহুগুণ সম্পন্ন একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধি পাতা যা শ্বাসকষ্ট, যক্ষা, বিভিন্ন ব্যথা নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই পাতার সঠিক ব্যবহার জানলে আপনি এর সব উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন।

তবে এই গাছের পাতা ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এবং কিছু নির্দেশাবলী মেনে গ্রহণ করা উচিত।

  1. প্রতিদিন ২ বার করে ৫-১০ মিলি মাশক পাতার রস পান করা যেতে পারে। 
  2. পাতাগুলি ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর পাউডার আকারে সেটিকে ব্যবহার করুন। এই পাউডার ১ কাপ হালকা উষ্ণ গরম জলের সাথে ২ থেকে ৩ গ্রাম মিশিয়ে দিনে ২ বার খাওয়া যেতে পারে। 
  3. একমুঠো পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ১ কাপ জল দিয়ে ফুটিয়ে তা প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা বেলা পান করুন। 
  4. দীর্ঘদিন ধরে হওয়ার সর্দি-কাশি ও জ্বর কমাতে ৩ থেকে ৪ দিন দিনে ২ বার করে এই পাতার রস খেতে পারেন, এটি খুবই কার্যকরী।  
malabar nut plant

সতর্কতা —

1. গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের এই গাছের কোন অংশ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার কারণ বাসক পাতা জরায়ুর সংকোচনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে। 
2. কিছু ব্যক্তির এই পাতা থেকে এলার্জি, ত্বকের সমস্যা, হজমের অস্বস্তি হওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে ডোজ দিয়ে শুরু করা উচিত।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *