আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে হলুদ ব্যবহার করার বিশেষ সুবিধা।

হলুদ এমন একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার যার শুধু আমাদের নিত্যদিনের রান্নায় ব্যবহার আর সাথে সাথে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হলুদ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কারকিউমিন ও আরো অন্যান্য ভালো এবং শক্তিশালী যৌগের কারণে ত্বককে দ্রুত উজ্জ্বল, সুন্দর, মসৃণ ও দাগহীন করে তুলতে পারে। 

এই ঘরোয়া প্রতিকার বিশেষত ত্বকের কালো দাগ ব্রণ যে কোন ফুঁস করি পুরনো পুড়ে যাওয়া বা কেটে যাওয়া দাগ সহজেই চামড়া থেকে মুছে ফেলতে পারে এবং এর থেকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি ত্বককে আরো বেশি ফর্সা উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।

এই উপাদানটি বহু যুগ ধরে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধি ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে এখনকার সময়ে এটি ব্যবহার করার জন্য কেউ আর বাড়িতে গাছ লাগিয়ে তা সংরক্ষণ করে ব্যবহার করেনা। বাজারে এর বিভিন্ন বিকল্প আছে যা মানুষ প্রায়শই ব্যবহার করে থাকে, তবে বাজার থেকে কিনে এনে হলুদের তৈরি ক্রিম, ফেসওয়াস, মশ্চারাইজার, ফেস প্যাক সহ আরো অন্যান্য প্রোডাক্ট ব্যবহার করা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যার কারণ হতে পারে। যার জন্য আজ আপনাদেরকে আমি ঘরে থাকা হলুদ এবং তার সাথে আরো অন্যান্য উপকরণ এর মাধ্যমে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এখানে তুলে ধরেছি। 

Rew Turmeric

সাবধানতা: 

অবশ্যই মনে রাখবেন হলুদ খুবই নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা বা প্রাকৃতিক একটি উদ্ভিদের জাত। তবে এটি কিছু কিছু মানুষের জন্য আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আপনি মসলা হিসেবে হলুদ আপনার নিত্যদিনের খাদ্যে গ্রহণ করে থাকেন এবং তাতে আপনার কোন রকম সমস্যা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি নিরাপদ, তবে সেই হলুদ ত্বকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যার কারণে প্যাচ টেস্ট করে তবে এটি ব্যবহার করুন। প্যাচ টেস্ট করার জন্য কাঁচা হলুদের রস বা সামান্য হলুদ গুঁড়ো কুনুই কিংবা হাতের তালুর বিপরীত দিকে লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করুন তারপর যদি কোনো জ্বালা বা অসস্তি অনুভব করেন তবে হলুদ আপনার জন্য নিরাপদ হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

ত্বকে হলুদ ব্যবহার করার বিশেষ কিছু সুবিধা। 

১. হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ, ফুসকুড়ি বা অন্যান্য ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

২. ত্বকের যেকোন পুরনো দাগ, ব্রণের দাগ বা পুড়ে যাওয়া, কালো ছোপ ও হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। 

৩. ত্বকের অন্যান্য সমস্যার মতো একজিমা একটি অন্যতম চামড়ার রোগ, তবে হলুদের সঠিক ব্যবহার একজিমা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। 

৪. ত্বককে UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে ও ত্বকের হওয়া বিভিন্ন ক্যান্সারের কোষ গুলোকে নষ্ট করে ফেলে। 

৫. চামড়ার বিভিন্ন ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে কাঁচা হলুদের প্রলেপ খুবই ভালো কাজ করে থাকে।

Turmeric benefits

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে হলুদ ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম।

হলুদ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে মনে রাখতে হবে সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে ত্বকের চামড়া কালো হয়ে যাওয়া বা দাগ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। 

হলুদ ব্যবহার সব সময় রাতের বেলা করা উচিত কারণ দিনের বেলা হলুদ ব্যবহার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ কেউ বাইরে রোদের মধ্যে বেরিয়ে যায়। তবে এটি চামড়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এতে চামড়া ক্যান্সার, ত্বক আরো বেশি কালো এবং দাগ যুক্ত হয়ে যায়। 

১. এক চামচ হলুদের গুঁড়ো, এক চামচ বেসন ও এক চামচ মধুর মধ্যে পরিমাণ মতো জল দিয়ে একটি গাঢ় পেস্ট তৈরি করে তা ত্বকে ও গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে শুকনো হাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিন (কমপক্ষে ১০ মিনিট)। ত্বকের পেস্টটি শুকিয়ে গেলে হাতের তালুতে সামান্য জল নিয়ে মুখের মধ্যে হালকা হাতে মাসাজ করে তারপর নরমাল জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি মাসে ৪ দিন ব্যবহার করতে হবে। 

এটি আপনার ত্বকের মধ্যে থাকা অবাঞ্ছিত কিছু ছোট ছোট লোম তুলে ফেলতে এবং ত্বকের পোরস গুলোকে  ওপেন করতে সাহায্য করবে।  

২. একটি পাত্রে ১ চামচ কাঁচা দুধ এবং ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে হওয়া ব্রণ মধ্যে লাগিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিন। তারপর জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

এই পেস্টটি মুখের ব্রণ দূর করবে এবং পরবর্তী সময়ে ব্রণ হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। 

৩. কাঁচা হলুদ বেটে আপনি নিত্যদিনের স্নানের সাথে ব্যবহার করতে পারেন। এক টুকরো কাঁচা হলুদ নিয়ে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে বেটে নিয়ে ত্বকের সাথে সাথে গোটা শরীরে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। 

এটি চামড়ার যেকোনো সমস্যা ও আঘাতের দাগ খুব দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। 

৪. ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো কিংবা কাঁচা হলুদের রস, ১ চামচ টক দই ও ১ চামচ গোলাপ জল একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি গাঢ় পেস্ট তৈরি করুন। এটি স্নানে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে মুখে ও গলার সাথে সাথে হাতে ও পায়ে ভালোভাবে লাগিয়ে ছেড়ে দিন। সরাসরি ৩০ মিনিট পর হালকা হাতে মাসাজ করে এটি ধুয়ে ফেলুন।

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন আপনার ত্বক খুব চকচকে ও মসৃণ হয়ে উঠেছে। 

ত্বকে হলুদ বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করার সাথে সাথে আপনি এটি খেয়েও বিশেষ উপকারিতা পেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেয়ে এক গ্লাস জল পান করে নিন। আপনি যদি এটি নিয়মিত করতে পারেন তবে পেটের যেকোন সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। ত্বক ভালো রাখার জন্য সর্বপ্রথম পেটকে সঠিকভাবে কাজ করাতে হবে, যার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পরিমাণ মতো জল পান করা অবশ্যই জরুরি।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *