চীনাবাদাম ও চীনাবাদাম গাছ Fabaceae Leguminosae পরিবারের একটি আরাচিস হাইপোগোয়া (Arachis Hypogaea) নামক লেবু জাতীয় উদ্ভিদের বীজ, যা মাটির নিচে বৃদ্ধি পায়। এই বাদাম প্রায় সারা বিশ্বে ব্যাপক ভাবে চাষ করা ও খাওয়া হয়। চীনাবাদাম বসন্ত কালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মের শেষে কিংবা শরতের শুরুতে কাটা হয়। চীনা বাদাম হল ডিম্বাকার আকৃতির একটি বীজ যা মাটির নিচে শুটির ভিতরে জন্মায়। এই গাছের ছোট সবুজ পাতা এবং গাঢ় হলুদ রঙের ফুল জন্মায়। এই চীনাবাদামের খোসা অর্থাৎ শেলটিতে সাধারণত দুটি এবং কখনো কখনো আরও বেশি বীজ বা কার্নেল থাকে। খোসার রঙ হালকা থেকে গাঢ় বাদামী রঙ এবং ভিতরে থাকা বীজ কাঁচা অবস্থায় সাদা হয়ে থাকে।
এই চীনাবাদাম শুধু যে স্বাদের জন্য খাওয়া হয় এমনটা নয়, এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি ( বিশেষ করে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড), প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন (Vitamin E, B9, নিয়াসিন) ও খনিজ পদার্থ (পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাস)। এশিয়ান, আফ্রিকান এবং আমেরিকান রন্ধন প্রণালীতে চীনাবাদামের ব্যবহার খুব বেশি হয়ে থাকে।
চীনাবাদামের পুষ্টি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উপাদান।
চীনাবাদাম খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। প্রতি 1 আউন্স (28 গ্রাম) চীনাবাদামের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: 570
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট
- প্রোটিন: 25 g
- চর্বি: 48 g
- মনোস্যাচুরেটেড: 24 g
- পলিআনস্যাচুরেটেড: 16 g
- কার্বোহাইড্রেট: 21 g
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 9 g
ভিটামিন
- Vitamin E: 6.6 mg (DV- 44%)
- B1 (থায়ামিন): 0.6 mg (DV- 52%)
- B3 (নিয়াসিন): 12.9 mg (DV -86%)
- B9 (ফোলেট): 246 µg (DV- 62%)
খনিজ
- পটাশিয়াম: 332 mg (DV- 7%)
- ফসফরাস: 336 mg (DV- 48%)
- ম্যাগনেসিয়াম: 184 mg (DV- 52%)
- ম্যাঙ্গানিজ: 2.0 mg (DV- 95%)
চীনাবাদাম খাওয়ার ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। 6 Important Health Benefits of Eating Peanuts.
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি সুরক্ষা: চীনাবাদামে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যেগুলি কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এই বাদাম একটি পুষ্টিকর খাবার যাতে রয়েছে ভিটামিন E, B3 ও B9 সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এই পুষ্টি গুলি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ এর সাথে জড়িত।
হৃদয়ের স্বাস্থ্য সমর্থন: চীনাবাদামের মধ্যে ওলিক অ্যাসিড এবং লিনোলিক অ্যাসিড সহ মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড এর মত ফ্যাট আছে, যা স্বাস্থ্যকর চর্বিতে পরিণত হয়। এই চর্বির রক্তে খারাপ LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যেটি আমাদের হার্টকে বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আরও অন্যান্য হার্ট প্রতিরক্ষামূলক যৌগ রয়েছে।
ওজন ব্যবস্থাপনা: উচ্চ ক্যালরি যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চীনাবাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণের একটি বিশেষ অংশ হতে পারে। এতে উপস্থিতি প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারের সংমিশ্রণ শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণতার অনুভূতি যোগায়। এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে, সামগ্রিক ক্যালরি গ্রহণ কমাতে পারে, যা ওজন হ্রাস করা বা ওজন ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস সুরক্ষা: এই বাদামে উপস্থিত ফাইবার এবং প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট কার্বোহাইড্রেট এর শোষণকে কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
পেটের স্বাস্থ্য সুরক্ষা: এতে থাকা খাদ্যতালিকাগত ফাইবার পাচন তন্ত্রকে ভালো রাখে। ফাইবার আমাদের নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি প্রচার করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, নিয়মিত মলত্যাগ এবং সুষম অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম সমর্থন করতে সাহায্য করে।
চীনাবাদাম বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে থাকলেও এটা মনে রাখা উচিত যে এতে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরির ঘনত্ব রয়েছে, যার কারণে সঠিক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত চীনাবাদাম বা চীনাবাদাম যুক্ত খাবার খাওয়া উচ্চ ক্যালরি গ্রহনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চীনাবাদাম খাওয়ায় অ্যালার্জি যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষতি। Damage to people allergic to peanuts.
বেশিরভাগ মানুষের জন্য চীনাবাদামের সবথেকে ক্ষতিকর দিক হল অ্যালার্জি। চীনাবাদাম খাওয়ার পর তুলনামূলকভাবে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি এবং জীবনের হুমকি হতে পারে।
অ্যালার্জির লক্ষণ: চীনাবাদামে অ্যালার্জি যুক্ত ব্যাক্তিদের বিশেষ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এতে পাওয়া প্রোটিনের সাথে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণ গুলোর মধ্যে চুলকানি, আমবাত, হজমের সমস্যা (পেট ব্যথা, বমি), শ্বাসকষ্ট সহ গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্সিস এর মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যানাফিল্যাক্সিস: অ্যানাফিল্যাক্সিস হল এমন একটি সমস্যা যা মারাত্মক গুরুতর ও প্রাণঘাতী হতে পারে। এটি চীনাবাদামের সংস্পর্শে আসা কিংবা খাওয়ার ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। যদি সঠিক সময়ে (এপিনেফ্রিন) অ্যাড্রেনালিন দিয়ে চিকিৎসা না করা হয় তবে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
এপিনেফ্রিন: চীনাবাদামে অ্যালার্জি যুক্ত ব্যক্তিদের এক্সপোজারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই এপিনেফ্রিন ইনজেকশন। এপিনেফ্রিন গুরুতর থেকে মারাত্মক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার প্রভাবকে বিপরীত করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং চিকিৎসায় খুব দ্রুত এই ইনজেকশন কাজ করে।
এলার্জি বিকাশ লাভ: চীনাবাদামের অ্যালার্জি খাবারের মধ্যে সবথেকে সাধারণ অ্যালার্জি, যা পশ্চিমা দেশ গুলোতে প্রায় শৈশব এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক আসার পর বিকাশ লাভ করতে পারে।