জলপাই হল টক জাতীয় একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল, যা ভারত ও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের উৎপাদন হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিকভাবে জলপাই Elaeocarpus serratus নামে পরিচিত তবে ইংলিশে এটি অলিভ (Olive) নামেও জানা যায়।
জলপাই ফলের সম্ভাব্য পুষ্টির মান।
- ক্যালরি: 115 কিলোক্যালরি
- ডায়েটারি ফাইবার: 3-4 গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 15 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 4 গ্রাম
- ভিটামিন E: 1.65 গ্রাম
- ভিটামিন A: 42 IU
- পটাশিয়াম: 42 মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: 52 মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: 600-900 মিলিগ্রাম
জলপাই এর উপকারিতা। The benefits of olives.
১. হার্টের স্বাস্থ্য: জলপাই ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টকে ব্লক হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল LDL কে কমায় ও ভালো কোলেস্টেরল HDL কে বাড়িয়ে তোলে।
২. আন্টি-ইনফ্লেমেটরি: এই ফলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রভাব বিভিন্ন প্রদাহ এবং আর্থারাইটিস এর মতো লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
৩. হাড়ের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জলপাই হাড়কে মজবুত করে ও হাড় সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৪. ত্বকের যত্নে: জলপাইয়ের তেল প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট (ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে) হিসাবে কাজ করে। এটি শুষ্ক ও ডিহাইড্রেট ত্বকের জন্য সবথেকে বেশি উপকারী। এছাড়াও জলপাই ফলে থাকা ভিটামিন E ও পলিফেনল বলিরেখা, বার্ধক্য, রোদে পোড়া দাগ, ত্বকের লালা ভাব, একজিমা, সোরিয়াসিস এবং ডার্মাটাইটিসের মতো রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
৫. চুলের যত্নে: অলিভ অয়েল চুলের জন্য খুবই ভালো একটি তেল। এই তেল চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে, শুষ্ক ও ভেঙ্গে যাওয়া থেকে চুলকে রক্ষা করে। এই তেলের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকি হওয়া থেকে বাঁধা দেয় ও চুলের ফলিকলকে রক্ত সঞ্চালন করে চুলের বৃদ্ধিকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
৬. হজমের স্বাস্থ্য: এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য তালিকা গত ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় নিয়মিত মল থেকে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সাথে মোকাবিলা করে হজমের স্বাস্থ্যকে আরো ভালো করে তোলে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ: জলপাইয়ের তেল কিংবা জলপাই ফল খাবারের সাথে যোগ করে খেলে এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরকে পূর্ণতম অনুভূতি যোগায় যার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে।
৮. মানসিক স্বাস্থ্য: বিশেষ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই ফলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমায়, সুস্থ মেজাজ বজায় রাখে এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতায় বিশেষ অবদান রাখে।
৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা: জলপাই ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো শরীরের ফ্রি রেডিকেলগুলোকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সারের কোষ গুলোকে নষ্ট করে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
১০. আলঝেইমার: জলপাই ফল আলঝাইমার রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
জলপাই এর অপকারিতা। Disadvantages of olive.
সম্ভবত জলপাই ফল খাবার ফলে বিশেষ কোনো সমস্যা হওয়ার ধারণা নেই বললেই চলে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সম্ভাব্য কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১. পেটের সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণে জলপাই ফল খাওয়ার ফলে যে কোন মানুষেরই বমি, ডায়রিয়া, গ্যাস, বদহজম, এসিডিটি সহ আরো অন্যান্য পেটের সমস্যা হতে পারে।
২. ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জলপাই খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি ও হতে পারে কারণ এতে ক্যালরির ঘনত্ব অনেক বেশি।
৩. সোডিয়ামের উচ্চ মাত্রা: লবণাক্ত জলে সংরক্ষিত করে রাখা জলপাই ফলের মধ্যে সোডিয়ামের মাত্রা উচ্চ পরিমাণে থাকতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ সহ আরো অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে এগুলি খুবই কম পরিমাণ কিংবা কম সোডিয়াম যুক্ত ফল বেছে নেওয়া বা খাওয়ার আগে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে তবেই গ্রহণ করা উচিত।
৪. এলার্জির সম্ভাবনা: জলপাই ফল থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল হওয়ার সত্বেও বেশ কিছু মানুষের এটি থেকে এলার্জি হওয়ার বিশেষ কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিক্রিয়া গুলি হালকা চুলকানি থেকে ভারী চুলকানি, আমবাত, শ্বাসকষ্ট সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জলপাই এর ব্যবহার। Uses of olives.
জলপাই ফল কাঁচা এবং পাকা দু অবস্থাতেই খাওয়া যায়। এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্য আচার বানিয়ে, তেলে ডুবিয়ে বা নুন জলের মধ্যে রাখা হয় যাতে এটি ভালো থাকে এবং দীর্ঘসময়ের জন্য এটিকে ব্যবহার করা যায়। এই ফলে পুষ্টিগুণ ভরপুর মাত্রায় রয়েছে, যার কারণে সকালের জলখাবার থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত এটিকে খাবারের সাথে যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি মাত্রায় জলপাই খাওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যার দেখা যেতে পারে যেটি জলপাই এর অপকারিতায় লেখা রয়েছে। সঠিক পরিমাণ বা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে এর সমস্ত উপকারিতা আপনি পেতে পারেন। সবুজ জলপাই এর চাইতে কালো রঙের জলপাইতে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। জলপাই সালাদ, জুস ও বিভিন্ন খাবারের সাথে যুক্ত করে খাওয়া যেতে পারে। জলপাইয়ের তেল অর্থাৎ অলিভ অয়েল বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করলে সেটি আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সহায়তা করে, এছাড়াও অলিভ অয়েল বিভিন্ন সালাদ কিংবা স্যুপ এর মধ্যেও যুক্ত করে খাওয়া যেতে পারে।