পালং শাক Amaranthaceae পরিবারের সবুজ পাতাযুক্ত একটি পুষ্টিকর সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Spinach Oleracea। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার স্থানীয় তবে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন এই সবজি ব্যাপক ভাবে চাষ হয়ে থাকে। এটি সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে চাষ হয়ে থাকে এবং এই শাক একটি শীতকালীন সবজি হিসাবে পরিচিত। এটি জাতের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের হয়, তাদের মধ্যে কিছু কিছু পালং শাক চওড়া, চ্যাপ্টা, মসৃণ, কুচকানো হয় এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ ও হালকা মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এটি কাঁচা অবস্থায় কিংবা হালকা সিদ্ধ করে খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে। তবে এর ও অনেক রন্ধন প্রক্রিয়া আছে।
এই শাক ভিটামিন A, C, K, B9, B6 ও আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এর মতো বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ।
পালং শাকের পুষ্টি (Nutrition’s) ভিটামিন ও খনিজের উপকারিতা।
প্রতি 100 গ্রাম পালং শাকের পুষ্টি:
- ক্যালরি – 23 kcal
- কার্বোহাইড্রেট – 3.6 gm
- ফাইবার – 2.2 kcal
- চিনি – 0.4 gm
- প্রোটিন – 2.9 gm
- চর্বি – 0.4 gm
- vitamin C – 28.1 mg
- vitamin A – 469 ug
- vitamin K – 482.9 ug
- vitamin E – 2.03 mg
- vitamin B9 – 194 ug
- vitamin B6 – 0.195 mg
- পটাশিয়াম – 558 mg
- ম্যাগনেসিয়াম – 79 mg
- সোডিয়াম – 79 mg
- ফসফরাস – 49 mg
- আয়রন – 2.71 mg
- জিংক – 0.53 mg
- ম্যাঙ্গানিজ – 0.897 mg
ভিটামিন: পালং শাকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন C রয়েছে, যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত অন্যান্য ভিটামিন K, ভিটামিন E, ভিটামিন A শরীরের ইমিউন ফাংশন কে সমর্থন করে, হাড়কে সুস্থ এবং মজবুত রাখে, চোখের দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখে এবং আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়ে থাকে। B9 গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের নিউরাল টিউবের সঠিক বিকাশ কে সমর্থন করে। B6 প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি সহ শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাথে জড়িত।
খনিজ: পালং শাকে বেশ ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আছে। এটি হাড়কে ভালো রাখে, টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়, শরীরের এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে পেশী এবং স্নায়ুর ফাংশন কে সমর্থন করে। আয়রন লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করতে সহায়তা করে। পালং শাকে উপস্থিত ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে এবং অস্টিওপরোসিস এবং হাড় সম্পর্কিত ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক এর মত খনিজ রয়েছে যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
পালং শাক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। Health Benefits of Spinach.
হৃদয় স্বাস্থ্য: পালং শাকে উপস্থিতি পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভিটামিন C অক্সিডেটিভ স্ট্রেস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মানসিক বিকাশ: পালং শাকে উপস্থিত B ভিটামিন স্নায়ুতন্ত্রকে বিশেষভাবে সমর্থন করতে সাহায্য করে এবং এটি মেজাজ ও মানসিক সুস্থতায় বিশেষ অবদান রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: পালং শাকে ফাইটোকেমিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্লাভোনয়েড ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: এই শাক কম ক্যালরি যুক্ত হয়, এটি আপনি আপনার ডায়েটে যুক্ত করতে পারেন এবং নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ: এতে উপস্থিত ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও নিয়মিত মলত্যাগ করতে সহায়তা করে পেটের অস্বস্তি এবং পেট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে।
এনার্জি সিস্টেম: ভিটামিন C অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইউনিয়ন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
রান্নায় ব্যবহার
পালং শাক কাঁচা এবং সিদ্ধ অবস্থায় সালাদ হিসেবে খুবই প্রচলিত। তবে এটি বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে যেমন- ফিশ পালং, পালং পনির, ডাল দিয়ে পালং, পালং শাকের বড়া, পালং শাক ভাজা, পালং শাকের পকোড়া, পালং শাকের ঘন্ট, পালং শাকের লুচি, পালং অমলেট, পালং শাকের চাটনি, পালং পরোটা, আলু দিয়ে পালং, পালং শাকের ভর্তা সহ আরও অনেকে রন্ধন প্রক্রিয়া আছে যা আপনি নিজস্ব রুচি হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
পালং শাক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হলেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও অপকারিতা আছে। Side effects of spinach.
কিডনিতে পাথর: পালং শাকে অক্সালেট রয়েছে, যা আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ খনিজকে নষ্ট করে দিতে পারে। যেসব ব্যক্তিদের আগে থেকেই কিডনিতে পাথর বা কিডনির কোন সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে অক্সালেট গ্রহণ করলে পাথর গঠনে বৃদ্ধি পেতে পারে।
এলার্জি: হিস্টামিন নামক রাসায়নিক এই শাকের মধ্যে পাওয়া যায়, যা এলার্জির মতন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যেমন শরীর লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, গা-হাত ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ হতে পারে। যেসব ব্যক্তিদের এলার্জির মতন প্রতিক্রিয়া শরীরে উপস্থিত আছে তাদের ক্ষেত্রে একটু বিবেচনা করে কিংবা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এই ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
থাইরয়েড বৃদ্ধি: যেসব ব্যক্তিদের থাইরয়েড রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার কিংবা খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়া দরকার। কারণ এতে গয়ট্রোজেন নামক একটি পদার্থ রয়েছে যা আয়োডিন গ্রহণ করতে বাধা দেয় এবং থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে।
শিশুর জন্য পালং: 6 মাস বয়সের আগে কোন শিশুকে পালং শাক খাওয়ানো উচিত নয় বলে ডাক্তাররা মনে করেন, কারণ এতে নাইট্রেট এর উপাদান রয়েছে। যা শিশুদের রক্তে অক্সিজেন বহনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।