নারকেল গাছ গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ, যা তার ব্যবহার এবং বিভিন্ন সুবিধার জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। একে “জীবনের গাছ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ আমরা বিভিন্ন উপায়ে এর অংশগুলি খাদ্য এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারি। এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে কোকোস নুসিফেরা (Cocos nucifera) নামে পরিচিত। নারকেল গাছ সাধারণত লম্বায় 100 ফুট (30 মিটার) উচ্চতার হয়ে থাকে এবং এটি সরু থেকে হালকা মোটা অবস্থায় থাকা সোজা গাছ। এই গাছের পাতা লম্বা এবং একত্রে অনেকগুলো হয়ে থাকে যা কিছুটা পাখির পালকের মতো দেখতে হয়। এই পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। নারকেল গাছের বিশেষত্ব হলো তার ফল, যেটিকে আমরা ডাব কিংবা নারকেল বলে থাকি। ডাব সবুজ রঙের হয় এবং তার ভেতরে মিষ্টি জল এবং সাদা পাতলা স্তর যুক্ত সাস থাকে। নারকেল হলুদ থেকে হালকা বাদামি রঙের হয়ে থাকে এবং এর ভেতরের অংশে থাকা মাংস সাদা শক্ত এবং মিষ্টি জল যুক্ত হয়। যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। নারকেলের বাইরের অংশ শুকনো, আঁশযুক্ত হয়। এটি সাধারণত দড়ি, মাদুর, ব্রাশ এবং অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। কপার হল নারকোলের শুকনো মাংস যা তেল তৈরিতে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয় এবং এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
নারকেল খাদ্য হিসেবে যতোটা গ্রহণযোগ্য ঠিক তেমনি এর বিশেষ ঔষধি গুনগুন ও আছে। যা আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।
নারকেলের পুষ্টি (Nutrition’s) ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উপকারিতা।
100 গ্রাম নারকেলের পুষ্টি:
- ক্যালোরি: 354 কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট: 15 গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 9 গ্রাম
- চিনি: 6 গ্রাম
- প্রোটিন: 3.3 গ্রাম
- মোট ফ্যাট: 33 গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: 29.70 গ্রাম
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 1.43 গ্রাম
- পপি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: 0.37 গ্রাম
- Vitamin C: 3.3 মিলিগ্রাম
- Vitamin B6: 0.054 মিগ্রা
- ফোলেট (vitamin B9): 26 μg
- পটাসিয়াম: 356 মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: 20 মিগ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম: 32 মিলিগ্রাম
- তামা: 0.435 মিগ্রা
- ম্যাঙ্গানিজ: 1.500 মিলিগ্রাম
- আয়রন: 2.43 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: 113 মিগ্রা
ভিটামিন ও খনিজ: ভিটামিন C অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর একটি বৈশিষ্ট্য যা কোষকে রক্ষা করে, ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করে এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য গঠন, নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন ও লোহিত রক্তকণিকা গঠনের সাথে জড়িত।
ভিটামিন B9 কোষ বিভাজন, DNA সংশ্লেষণ, ভ্রুনের বিকাশ করতে সহযোগিতা করে।
পটাশিয়াম রক্তে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং পেশী ও স্নায়ু ফাংশনের সাথে জড়িত থাকে।
ম্যাগনেসিয়াম শক্তি উৎপাদন, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং একটি সুস্থ হার্ট বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তামা চুল, ত্বক এবং সংযোগকারী টিস্যুর জন্য কোলাজেন উৎপাদনে সমর্থন করে এবং আয়রন শোষণে সহায়তা করে।
ফসফরাস DNA এবং RNA সংশ্লেষণে ভূমিকা রাখে।
জিঙ্ক ইমিউন সিস্টেম ফাংশন, ক্ষয় নিরাময়, ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শরীরের বিভিন্ন এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়ার সাথে জড়িত।
আয়রন রক্তে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য একটি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে এবং আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
নারকেল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি, যা আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা দেয়। Health Benefits of Coconut.
ত্বক ও চুলের যত্ন: নারিকেল তেল চুল এবং ত্বকের ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করে, এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখতে খুবই উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সাথে সাথে চুলের নষ্ট হয়ে যায় পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: নারকেলের তেল এবং জলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা অক্সিডেটিভ ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য: এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মতন খনিজ হাড়কে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: নারকেল খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত হতে পারে। স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার সামগ্রী রক্তে শর্করা উন্নত ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখতে পারে।
হজম স্বাস্থ্য: নারকেলে থাকা খাদ্যতালিকাগত ফাইবার, মলত্যাগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত যৌগ অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ভাইরাল স্বাস্থ্যকর অন্তের পরিবেশে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
ওজন হ্রাস: নারকেলের তেলে পাওয়া MCTS ওজন ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সাহায্য করতে পারে। এগুলো শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করায় এবং অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ হ্রাস করতে পারে।
রন্ধন সম্পর্কে ব্যবহার
নারকেল বিশ্বের বিভিন্ন জেলায় রন্ধন রন্ধনসম্পর্কীয় ব্যবহার এবং সুবিধার জন্য খুবই উপযোগী। নারকেলের বিভিন্ন রেসিপি রয়েছে যেমন- নারকেলের দুধ, নারকেলের গ্রেড করা মাংস থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার। শীতের সময় নারকেলের পিঠে, নারকেলের কেক, নারকেলের পায়েস, নারকেলের পোলাও, নারকেল দিয়ে গুড়ের নাড়ু ও চিনির নাড়ু, নারকেলের বিভিন্ন পিঠে, সন্দেশ, কেক, নারকেল দিয়ে মটন, পকোড়া, কচুরি, নারকেল দিয়ে চিকেন, নারকেল দিয়ে বিভিন্ন সবজি, নারকেলের দুধের লস্যি।
নারকেল খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। Some side effects of consuming coconut.
এলার্জি প্রতিক্রিয়া: নারকেল একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও কিছু ব্যক্তির নারকেল খাওয়ার পর এলার্জির মতন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বকের মধ্যে জ্বালা, চুলকানি, গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা।
ওভারলোড ক্যালরি: নারকেলের উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদানের কারণে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: নারকেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং এটি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটি বিশেষ করে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
গ্যাসের সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণে নারকেল খেয়ে ফেলার পর গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যেমন ডায়রিয়া, বমি, বুকে ব্যথা, গলা-বুক জ্বালা ইত্যাদি।