জাম ছোট এবং মিষ্টি প্রজাতির ফল। এটি Myrtaceae পরিবারের অন্তর্গত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিয়াম কিউমিনি (Syzygium Cumini)। এই ফল ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সহ আরো বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। জাম ফলটি সাধারণত জাভা বরই, জাম্বুল, ব্ল্যাকবেরি নামে বিশেষভাবে পরিচিত।
জাম গাছ সাধারণত 15 থেকে 30 মিটার (50-100) ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি গাঢ় সবুজ চকচকে পাতা সহ ছোট সুগন্ধি সাদা ফুল যুক্ত হয়ে থাকে। এই ফল একগুচ্ছে এবং একক বিযুক্ত হয়। জাম কাঁচা অবস্থায় সবুজ হয়ে থাকে যা একদম গ্রহণযোগ্য নয়, এটি পাকার পর হালকা বেগুনি থেকে গাঢ় কালো রঙের হয় যা সম্পূর্ণ মিষ্টতা এবং গন্ধে ভরপুর হয়ে থাকে। জাম গাছে মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ফুল চলে আসে এবং মে- জুন মাসের মধ্যে ফল ধরে। এই ফল কিছুটা গোলাকার এবং ডিম্বাকার আকৃতি হয়ে থাকে।
এই ফলটি বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এবং জাম গাছের ফল, বীজ, পাতা এবং ছাল বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য আয়ুর্বেদিক মতে ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজমের সহায়তা করতে বিশেষ উপযোগী।
জাম ফলটি বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, ভিটামিন C, A, এবং B ভিটামিন সহ ক্যালসিয়াম, আয়রন এর মত খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল।
জাম ফলের পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
100 গ্রাম পাকা জাম ফলের পুষ্টি:
- ক্যালোরি – 60-70 কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট – 15.56 গ্রাম
- ফাইবার – 4-6 গ্রাম
- চিনি – 9-14 গ্রাম
- প্রোটিন – 0.72 গ্রাম
- ফ্যাট – 0.23 গ্রাম
- Vitamin C – 18 মিলিগ্রাম
- Vitamin A – 55 IU
- ক্যালসিয়াম – 15-20 মিলিগ্রাম
- আয়রন – 0.5-1 মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – 80-100 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – 10-15 মিলিগ্রাম
ভিটামিন ও খনিজ: জাম ভিটামিন C এর একটি ভালো উৎস, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপন্ন করে। এটি ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করে, শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে রক্ষা করে এবং আয়রন শোষণ করতে ত্বকেকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। এবং এতে উপস্থিত ভিটামিন A সুস্থ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফলের রয়েছে যেমন থায়ামিন B1, নিয়াসিন B2, রিবোফ্লাভিন B3, B6 সহ আরো বিভিন্ন B ভিটামিন।
জাম পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল যা স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। Health benefits of Java plum.
ইমিউন সাপোর্ট: জাম ভিটামিন C এর একটি ভালো উৎস, যা ইমিউন সিস্টেমকে সাপোর্ট করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: জামকে ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন ব্রণ, কালো দাগ এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, UV রশ্মি থেকে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়ে থাকে।
রক্তে শর্করার মাত্রা: জাম ফলকে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। জমে থাকা যৌগ ইনসুলিন উন্নত করতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের সহায়তা করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: এই ফলে থাকা ফাইবার শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভর্তি অনুভব করায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
পাচক স্বাস্থ্য: এই ফলের মধ্যে থাকা খাদ্যতালিকাগত ফাইবার হজমে সাহায্য করে নিয়মিত মলত্যাগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পেটকে মুক্তি প্রদান করে।
হৃদয় স্বাস্থ্য: এই ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের বিশেষ অবদান রাখে।
জামের কিছু ব্যবহার
জামের বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপি রয়েছে যা আপনি ঘরে তৈরি করে খেয়ে তার স্বাদ অনুভব করতে পারে। যেমন – জামের মিষ্টি, জাম মাখা, শরবত, ভর্তা, জামের চাটনি জেলি।
জাম পুষ্টিকর ফল হওয়ার সাথে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। Side effects of consuming Java plum.
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: যদিও জাম ফলটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর ফল। তবুও কিছু মানুষের এই ফল থেকে এলার্জির মত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন চুলকানি, ফোলা ভাব, আমবাত, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
রক্তে শর্করার মিথস্ক্রিয়া: এই ফল কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এর কারনে ডায়াবেটিস রোগীরা এই ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে নেবেন। সাধারণ ব্যক্তিদেরও অতিরিক্ত এই ফল খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো গ্রহণ করা উচিত।
হজমে অস্বস্তি: অতিরিক্ত পরিমাণে জাম খেয়ে ফেলার পর কিছু ব্যক্তির হজমে সমস্যা হতে পারে। যেমন পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা।
কিডনিতে পাথর: এই ফলে থাকা অক্সালেট নামক যৌগ কিছু ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর গঠনে অবদান রাখতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির আগে থেকেই কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে তাদের এই ফল থেকে বিরত থাকা দরকার।
দাঁতের স্বাস্থ্য: কিছু ফলের মতন জামের মধ্যেও প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ রয়েছে। যা অত্যধিক খাওয়ার ফলে দাঁতের সমস্যা ঘটাতে পারে।