বাঁধাকপি হলো ধরনের সবজি। এটি Brassicaceae পরিবারের অন্তর্গত, এর মধ্যে ব্রকলি, ফুলকপি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো সবজিও রয়েছে। বাঁধাকপির সবুজ থেকে হালকা সাদা, লাল, বেগুনি, নাপা ও সেভয় সহ বিভিন্ন জাত আছে, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব চেহারা এবং গন্ধ রয়েছে। এই সবজি বৃত্তাকার বা ডিম্বাকার আকৃতি কিছুটা কুঁচকানো পাতাযুক্ত হয়ে থাকে। সবুজ বাঁধাকপি সবচেয়ে সাধারণ জাত এবং এর ফ্যাকাসে থেকে গাঢ় সবুজ পাতা রয়েছে। লাল ও বেগুনি বাঁধাকপি নাম অনুসারে লালচে-বেগুনি পাতাযুক্ত হয়, সেভয় বাঁধাকপি কুচকানো পাতা সহ হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। নাপা বাঁধাকপি সাধারণত এশিয়ান খাবার-দাবার এই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এটি ফ্যাকাশের সবুজ রঙের, দীর্ঘায়িত পাতাযুক্ত হয়। এই সবজি 1-2 পাউন্ড এর ও বিভিন্ন আকার এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে ওজনের পরিবর্তন হতে পারে। বাঁধাকপির পাতাগুলো চওড়া এবং মাথার চারপাশে মোটা স্তর তৈরি করে, লেটুস পাতার তুলনায় এই পাতাগুলি সাধারণত ঘন এবং আরও বেশি পরিমাণে হয়। বাঁধাকপি রান্নায় তার বহুমুখীতার জন্য পরিচিত এবং কাঁচা ও রান্না উভয় ধরনের রন্ধনসম্পর্কীয় খাবারে ব্যবহৃত হয়। বাঁধাকপি চাষের জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোকের দরকার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে 6 ঘন্টা সরাসরি সূর্যের তাপের প্রয়োজন।
বাঁধাকপির পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ এর উপকারিতা।
100 গ্রাম কাঁচা বাঁধাকপির পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: 25 kcal
- প্রোটিন: 1.28 g
- মোট চর্বি: 0.1 g
- কার্বোহাইড্রেট: 5.8 g
- ডায়েটারি ফাইবার: 2.5 g
- চিনি: 3.2 g
- Vitamin C: DV এর 36%
- Vitamin K: দৈহিক মূল্যের 56% (DV)
- ক্যালসিয়াম: 40 mg
- আয়রন: 0.47 mg
- ম্যাগনেসিয়াম: 0.16 mg
ভিটামিন: বাঁধাকপি ভিটামিন C এর একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমর্থন, স্বাস্থ্যকর ত্বকের প্রচার, ক্ষত নিরাময় সহ শরীরকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ভিত্তিক উৎস থেকে আয়রন শাসন করতে সহায়তা করে। ভিটামিন K শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে, হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে এবং ফ্রাকচারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের বিকাশ এবং কার্যকারীতার পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খনিজ:
বাঁধাকপির অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম শক্তিশালী হাড়, দাঁত এবং পেশির কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন লোহিত রক্তকণিকা গঠন এবং সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয়। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ৩০০ টিরও বেশি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাথে জড়িত, যার মধ্যে পেশী এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা, রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ আরও বিভিন্ন খনিজ স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ, তরল ভারসাম্য বজায়, স্নায়ুর কার্যকারিতা ও কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা সহ বিভিন্ন শারীরিক প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্যতালিকাগত ফাইবার:
খাদ্যতালিকাগত ফাইবার ভিটামিন বা খনিজ নয়, তবে এটি বাঁধাকপির একটি ভালো উৎস বলা যেতে পারে। ফাইবার হজমের স্বাস্থ্য প্রচার করে, স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখে এবং পূর্ণতার অনুভূতি প্রচার করে ওজন ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখতে পারে।
বাঁধাকপি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা। Health Benefits of Eating Cabbage.
পুষ্টিগুণে ভরপুর: বাঁধাকপিতে কম ক্যালরি থাকায় এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর ভিটামিন K হাড়কে মজবুত রাখে, ভিটামিন C অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবার হজমে সহায়তা করে, ও অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে।
আন্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি: বাঁধাকপি দিয়ে ফ্লাভোনয়েড সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের কোষকে ফ্রি রেডিকেলের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলিরও প্রদাহ বিরোধী প্রভাব রয়েছে, যা হৃদরোগ এবং আর্থারাইটিস এর মত দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি নিরাময় করে।
হৃদয় স্বাস্থ্য: বাঁধাকপি নিয়মিত সেবনের ফলে হৃদরোগের বিশেষ উপকারিতা হতে পারে। এতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রক্তচাপ কমাতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: এতে উপস্থিত সালফোরাফেন এবং গ্লুকোসিনোলেটসের মতো ও যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শক্তি যোগায়। এই যৌগগুলি কোলন, স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
হজম স্বাস্থ্য: এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর হজমকে উৎসাহিত করে। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া খাওয়ানোর মাধ্যমে পেটের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
রান্নার ব্যবহার
বাঁধাকপি রন্ধনসম্পর্কে খুব ব্যবহার হয়। এটি কাঁচা এবং রান্না, দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় বিভিন্ন নামি দামি খাবারের গারনিশিং, স্যান্ডউইচ সহ আরো বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বাঁধাকপির পকোড়া, আলু দিয়ে তরকারি, বাঁধাকপির টক, জুস, স্যুপ, ভাজা, চচ্চড়ি, বাঁধাকপি সয়াবিন কুমড়ো দিয়ে তরকারি, বাঁধাকপি প্লাস্টিক চাটনি, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপি শহর বিভিন্ন রেসিপি রয়েছে।
বাঁধাকপির অপকারিতা। Disadvantages of cabbage.
থাইরয়েড স্বাস্থ্য: কাঁচা বাঁধাকপির অত্যধিক ব্যবহার থাইরয়েড ফাংশনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। মাঝারি এবং রান্না করা বাঁধাকপি খাওয়া থাইরয়েড ফাংশনের উপর সম্ভাব্য প্রভাব কমাতে পারে।
FODMAPS: বাঁধাকপি দিয়ে নির্দিষ্ট ধরনের কার্বোহাইড্রেট থাকে যা FODMAPS (ফার্মেন্টটেবল, অলিগোস্যাকারাইড, মনোস্যাকারাইডস এবং পলিওলস) নামে পরিচিত। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা অন্যান্য হজম সংবেদনশীলতায় আক্রান্ত কিছু ব্যক্তিদের বাঁধাকপির মতো উচ্চ FODMAPS খাবার খাওয়ার সময় পেটে ব্যথা, গ্যাস, ফোলা ভাবের মতো লক্ষণগুলি হতে পারে।
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু ব্যক্তির বাঁধাকপি বা অন্যান্য ক্রুসিফেরাস সবজিতে এলার্জি হতে পারে, সেক্ষেত্রে চুলকানি, ফোলা ভাব, গা-হাত ফুলে যাওয়া, শ্বাস নিতে না পারার মতো অসুবিধা হতে পারে।
ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: এতে উপস্থিত ভিটামিন K ওয়ারফারিন এর মতো রক্ত পাতলা করার ওষুধে হস্তক্ষেপ করে। নিয়মিত ভিটামিন K যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিদের সমস্যা হতে পারে।