কেন খাবেন বিটরুট? জেনে নিন সম্পূর্ণ তথ্য। Beetroot 

বিটরুট একটি মূল উদ্ভিজ্জ, যা চার্ড এবং পালং শাক পরিবারের অন্তর্গত। এটি তার উজ্জ্বল টকটকে লাল-বেগুনি রঙের জন্য পরিচিত, যদিও হলুদ এবং সাদা জাতও রয়েছে। বিটরুট তার মিষ্টি স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিটরুটের ভোজ্য অংশ হলো এর ফুলে যাওয়া শিকড় যা সাধারণত কন্দ এবং গোলাকার হয়, তবে এর জাতের উপর নির্ভর করে আকারের পরিবর্তন হতে পারে। এটি কাঁচা অবস্থায় খাস্তা টেক্সচার যুক্ত হয়, কিছুটা গাজরের মতই এবং রান্না করলে নরম হয়ে যায়। এই বিটরুটের পাতা কিছুটা মুলো পাতার মতো হয় এবং এর পাতাও বিভিন্ন রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিটরুটের মধ্যে ভিটামিন C, ফোলেট, পটাশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ সহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।  

meny beetroot

বিটরুটের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও খনিজ। 

100 গ্রাম বিটরুটের পুষ্টি উপাদান: 

  • ক্যালোরি: 43 
  • কার্বোহাইড্রেট: 9.8 g 
  • ডায়েটারি ফাইবার: 2.8 g 
  • চিনি: 7 g 
  • প্রোটিন: 1.6 g 
  • ফ্যাট: 0.2 g 
  • Vitamin C: 4.9 mg (DV- 8%)
  • Vitamin B6: 0.067 mg (DV-5%) 
  • পটাশিয়াম: 325 mg (DV-9%) 
  • আয়রন: 0.8 mg (DV-4%)
  • ক্যালসিয়াম: 16 mg (DV-1%)
  • ম্যাগনেসিয়াম: 23 mg (DV-5%)
  • জলের পরিমাণ: 88%

ভিটামিন ও খনিজ

বিটরুট ফোলেট একটি ভালো উৎস। এটি DNA সংশ্লেষণ, কোষ বিভাজন, সঠিক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন C ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করে, স্বাস্থ্যকর ত্বকের প্রচার করে ও বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় করতে সহায়তা করে। ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যকারিতার পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি বিপাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  

পটাশিয়াম স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ, তরল ভারসাম্য বজায়, স্নায়ুর কার্যকারিতা, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আয়রন লোহিত রক্তকণিকা গঠন এবং সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করতে সহায়তা করে।ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা, রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, তামা ও জিংক এর মতো খনিজ গুলি আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়ে থাকে। 

Chopped beetroot is placed on the plate

বিটরুটের সাস্থ্য উপকারীতা। Health benefits of beetroot.

সুস্থ হৃদয়: বিটরুট উচ্চ নাইট্রেট সামগ্রীর কারণে রক্তচাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয়। বিটরুট এর মত নাইট্রেট সমৃদ্ধ খাবার গুলো রক্তনালীকে শিথিল করতে, রক্তের প্রবাহ উন্নত করতে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। 

উন্নত ব্যায়াম কর্মক্ষমতা: বিটরুটে থাকা নাইট্রেট অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়াতে এবং সহনশীলতা বাড়াতে পারে, এটি প্রাকৃতিক কর্মক্ষমতা হিসেবে কাজ করে। কোন রকম কাজ কিংবা ব্যায়াম করার আগে বিটরুটের রস খেলে স্ট্যামিনা উন্নত হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়। 

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুরক্ষা: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেটালাইনস এবং ভিটামিন C শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। 

হজম স্বাস্থ্য: বিট খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের একটি ভালো উৎস, যা স্বাস্থ্যকর হজমে সহায়তা করে। ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে প্রচার করে।

ওজন ব্যবস্থাপনা: এতে ক্যালরি কম ও ফাইবার বেশি, যা আমাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার একটি ভালো উপাদান হতে পারে। ফাইবার খিদে নিয়ন্ত্রণ করে ক্যালরি গ্রহণ কমায় যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

beetroot juice

রান্নায় বিটরুট ব্যবহার

বিটরুট নানান উপায়ে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে, তবে এর জুস আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে থাকে। বিটের বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপি গুলো হল- বিটের হালুয়া, মোমো, স্যান্ডউইচ, সালাদ, জুস, মিল্ক সেক, ভেজিটেবিল চপ, বিট আলুর তরকারি, পরোটা, পুরি, বিট ভাজা, পকোড়া, বিট গাজরের তরকারি। এছাড়াও আরও অনেক সুস্বাদু বিটরুট রেসিপি রয়েছে।

Food made with beetroot

বিটরুট খাওয়ার কিছু অপকারিতা। Some disadvantages of eating beetroot.

লাল প্রস্রাব ও মল: বেশি পরিমাণে বিট খাওয়ার পর প্রস্রাব এবং মল লাল বা গোলাপি বর্ণে পরিণত হতে পারে। এটি ভিক্টোরিয়া নামে পরিচিত। 

কিডনির সমস্যা: বিট গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে অক্সালেট বেশি থাকে, যা কিডনিতে পাথর গঠনে অবদান রাখতে পারে। কিডনিতে পাথর থাকা রোগীদের উচ্চ অক্সালেট যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার। 

কিডনি বা লিভার: কিডনি বা লিভারের সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চ নাইট্রেট থাকা খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া থেকে সতর্ক থাকা দরকার, কারণ বিটে উচ্চ নাইট্রেট রয়েছে যা কিডনি এবং লিভারের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। 

রক্তের শর্করার প্রভাব: এতে প্রাকৃতিকভাবে শর্করার পরিমাণ বেশি, সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে। 

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: কিছু ব্যক্তির বিট খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে, যেমন পেট ফোলা, গ্যাস, অম্বল, বমি-বমি ভাব ও ডায়রিয়ার মতো আরও গুরুতর সমস্যা। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *