বেগুন বৈজ্ঞানিকভাবে Solanum melongena নামে পরিচিত। এবং এটি ভারতের খুব পরিচিত একটি সবজি। বেগুন একটি ফল, তবে আমরা সাধারণত এটিকে রান্নায় সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এটি নাইটশেড পরিবারের অন্তর্গত। যার মধ্যে রয়েছে টমেটো, মরিচ, আলু আরও অন্যান্য সবজি। এটি বীজ ধারন করার কারণে উদ্ভিদের ফুলের অংশ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া একটি ফল, যা আমরা সবজি হিসেবে গ্রহণ করি। বেগুন জাতের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রঙের হতে পারে। যেমন সাদা, সবুজ, বেগুনি, কালো, এমনকি ডোরাকাটা জাতের ও হয়ে থাকে, তবে পাকার পর কিছু জাতের বেগুনের রঙ হলুদ হয়ে যায়। এগুলি ডিম্বাকার এবং লম্বা আকৃতির হয়ে থাকে। বেগুনের ভিতরের অংশ সাদা হয় এবং তার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট বীজ থাকে যেগুলি থেকে পুনরায় একটি গাছ উৎপন্ন হয়।
পুষ্টির দিক দিয়ে বেগুনে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট কম থাকে, যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই কার্যকারী। এতে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার, ভিটামিন K, C, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম সহ আরও বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
বেগুনের পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ।
কাঁচা বেগুনের পুষ্টি:
- ক্যালোরি: 25 কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট: 5.88 গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 3 গ্রাম
- চিনি: 3.5 গ্রাম
- প্রোটিন: 0.98 গ্রাম
- চর্বি: 0.18 গ্রাম
- Vitamin K: 3.5 μg (4% দৈনিক মূল্য – DV)
- Vitamin C: 2.2 মিলিগ্রাম (3% DV)
- Vitamin B6 (পাইরিডক্সিন): 0.09 মিলিগ্রাম (7% DV)
- ফোলেট: 22 μg (5% DV)
- পটাসিয়াম: 229 মিলিগ্রাম (5% DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: 14 মিলিগ্রাম (3% DV)
- ম্যাঙ্গানিজ: 0.232 মিগ্রা (10% DV)
- আয়রন: 0.23 মিলিগ্রাম (3% DV)
- তামা: 0.047 মিগ্রা (5% DV)
ভিটামিন ও খনিজ: ফাইবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, মাইক্রোবায়োম কে প্রচার করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মতো বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধা, ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সমর্থন করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ, নিউরোট্রান্সমিটার গঠন, ভালো ঘুম, ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করতে কার্যকরী।
ফোলেট B9 কোষ বিভাজন, DNA সংশ্লেষণ, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পটাশিয়াম ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বেগুনের মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বেগুন বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর একটি ফল/ সবজি, যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। Various health benefits of eggplant.
হার্টের স্বাস্থ্য: বেগুনে ক্যালরি ও সেচুরেটেড ফ্যাট কম, ডায়েটারি ফাইবার বেশি। এই সংমিশ্রণটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে উন্নত করে হার্টকে সুস্থ রাখে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য: নাসুনিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: বেগুনের কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবার থাকার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চ ফাইবারের পরিমাণ খিদে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্বাস্থ্যকর হজমে সাহায্য করে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: এটা থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপযোগী।
মস্তিষ্কের বিকাশ: বেগুনে পাওয়া এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বয়স সম্পর্কিত জ্ঞান পতনের ঝুকি হাস করার সাথে যুক্ত এটি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মস্তিষ্কের বিকাশ করা যেতে পারে ।
রান্নায় বেগুন ব্যবহার
বেগুন একটি বহুমুখী এবং রান্নায় বহুল ব্যবহার হওয়া একটি ভালো সবজি। এটি বিভিন্ন রন্ধন সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় আমরা ব্যবহার করে খেতে পারি। বেগুনের দিয়ে তৈরি সবথেকে প্রচলিত রান্না হল বেগুনের ভর্তা, এছাড়াও বেগুনের আরো বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপি রয়েছে যেমন দই বেগুন, বেগুন ভাজা, বেগুনি, বেগুন দিয়ে মাছের তরকারি, বেগুন আলুর তরকারি, সিম বেগুনের তরকারি, বেগুন পোড়া, বেগুন ভাপা সহ আরো অনেক সুস্বাদু রেসিপি আছে যা আপনি রান্না করে বেগুনের একটি দুর্দান্ত স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।
বেগুন খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। Some side effects of eating eggplant.
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: বেগুন এমন একটি সবজি যা থেকে বেশিরভাগ মানুষেরই এলার্জির মতন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া গুলি চুলকানি ফোলা ভাব গাছ ফুলে যাওয়া শ্বাসকষ্টের মতো আরও ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেসব ব্যক্তিদের বেগুনে এলার্জির মতন প্রতিক্রিয়া হয় তাদের এটি খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত।
ডাইজেস্ট প্রবলেম: বেগুনে সোলানিন থাকে, যা প্রাকৃতিক ভাবে কিছু ব্যক্তির শরীরে হজমের মত অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে বেগুন খেলে কিংবা কাঁচা অবস্থায় খেয়ে ফেললে পেট ফোলা, গ্যাস ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
কিডনিতে পাথর: বেগুনে অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথর গঠনে বিশেষ অবদান রাখে। যেসব ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো সমস্যা আছে, তাদের খুব অল্প পরিমানে এটি খাওয়া উচিত।
হিস্টামিনের প্রভাব: এই সবজিতে হিস্টামিন থাকে, যা মাথা ব্যাথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, হজম সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।