আদা একটি উদ্ভিদ, যা বৈজ্ঞানিকভাবে জিঙ্গিবার আফিশনাল (Zingiber Officinale) নামে পরিচিত। এই উদ্ভিদের তার ভূগর্ভস্থ কান্ডের জন্য চাষ করা হয়, যেটি রাইজোম (Rhizome) নামে পরিচিত। এটি একটি মসলা, স্বাদযুক্ত এজেন্ট এবং ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আদা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা উচ্চতা 3 থেকে 4 ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এটির লম্বা, লেন্স আকৃতির পাতা এবং সবুজ সরু ডালপালা রয়েছে। রাইজোম হল আদা গাছের সবথেকে মূল্যবান অংশ মাটির নিচে থাকে। এই গাছে অত্যন্ত সুন্দর আকর্ষণীয় ফুল ধরে যেগুলো সাধারণত বেগুনি বা লাল-খয়েরি বা সবুজ হয়ে থাকে এবং এটির সামান্য মিষ্টি গন্ধ এবং একটি তীব্র সুবাস হয়।
আদার বিভিন্ন জাত রয়েছে, প্রতিটির আলাদা স্বাদ এবং নিজস্ব চেহারা আছে, সবথেকে সাধারণ জাতের মধ্যে রয়েছে বাদামি-হলুদ আদা এবং কালো আদা।
এই গাছ গুলো সাধারণত উষ্ণ, আদ্র জলবায়ু সহ গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে জন্মায়। এটি ভালোভাবে উৎপন্ন হওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতার প্রয়োজন। ঐতিহ্যগত ঔষধে আদা ব্যবহারের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি বমি বমি ভাব, প্রদাহ কমানো এবং আন্টি-অক্সিডেন্ট সুবিধা প্রদানের সম্ভাবনার জন্য পরিচিত, এবং আদা চা সাধারণত ঔষধি উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।
![There are many gingers kept together-min](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/There-are-many-gingers-kept-together-min.jpg)
আদার পুষ্টিগুণ (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ।
প্রতি 100 গ্রাম কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ:
- ক্যালোরি: 80 kcal
- কার্বোহাইড্রেট: 17.8 g
- ডায়েটারি ফাইবার: 2 g
- চিনি: 1.7 g
- প্রোটিন: 1.8 g
- ভিটামিন C: 5 mg (দৈহিক মূল্যের 9% DV)
- ভিটামিন B6: 0.16 mg (দৈহিক মূল্যের 8% DV)
- পটাশিয়াম: 415 mg (দৈহিক মূল্যের 12% DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: 43 mg (দৈহিক মূল্যের 11% DV)
- ফসফরাস: 34 mg (দৈহিক মূল্যের 3% DV)
- আয়রন: 0.6 mg (দৈহিক মূল্যের 3% DV)
আদার গন্ধ এবং স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ পরিবর্তিত হতে পারে। আদার জাত সতেজতা এবং কিভাবে প্রস্তুত করা হয় তার উপর নির্ভর করে পুষ্টির মান পরিবর্তন হতে পারে। আদা সাধারনত অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়, তাই পরিবেশন প্রতি পুষ্টি তুলনামূলকভাবে অনেক কম পাওয়া যায়। আদর শুধুমাত্র এর পুষ্টি উৎপাদনের জন্যই নয় বরং এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যসহ কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য বিশেষ মূল্যবান।
ভিটামিন ও খনিজ: আদার মধ্যে অল্প পরিমাণে ভিটামিন C রয়েছে, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমর্থন করে এবং স্বাস্থ্যকর ত্বকের প্রচার করে। সাইট্রাস ফলের মতো অন্যান্য উৎসের তুলনায় আদায় ভিটামিন C এর উপাদান কম হলেও এটি সামগ্রিক পুষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। ভিটামিন B6 পাইরোডক্সিন নামেও পরিচিত, যা নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের বিপাক সহ বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ, তরল ভারসাম্য বজায়, পেশী এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
![Ginger with white background-min](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/Ginger-with-white-background-min.jpg)
আদার ১১টি ঔষধি গুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। 11 Medicinal Properties and Health Benefits of Ginger.
আদা একটি জনপ্রিয় ভেষজ ঔষধি এবং মসলা, যা বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে জিঞ্জেরল নামক বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে, যা এর বিভিন্ন থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য: আদার শক্তিশালী আন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অস্টিওআর্থারাইটিস এর মতো রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
বমি-বমি ভাব এবং মোশন সিকনেস: বহু সময় থেকে বমি-বমি ভাব দূর করতে আদা ব্যবহার হয়ে আসছে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস, মোশন সিকনেস এবং অপারেশন পরবর্তী বমি-বমি ভাব এর জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
হজম স্বাস্থ্য: এটি হজমের এনজাইম গুলোর উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে বিভিন্ন হজম সংক্রান্ত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, যেমন পেট ফোলা, গ্যাস ও অম্বল সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
মাসিক ব্যাথা নিরাময়: আদা চা কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের মাসিকের ব্যথা এবং শরীরের বিভিন্ন অস্বস্তি কমাতে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
অ্যান্টি ক্যান্সার: কিছু গবেষণায় ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা সহায়ক থেরাপি হিসেবে এর ভূমিকাকে বাধা দেওয়ার জন্য আদার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধরা হয়।
অস্টিওআর্থারাইটিস: আদার নির্দিষ্ট ব্যবহার বিভিন্ন ব্যথা কমাতে পারে এবং অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জয়েন্টে ব্যথার কার্যকারিতা উন্নত করে তুলতে পারে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: আদা ইনসুলিন প্রতিরোধ হ্রাস করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে তোলে। টু টাইপ ডায়াবেটিস বা এই অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের বিশেষ উপকারিতা প্রদান করে।
কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য: আদা রক্তচাপ কমাতে বিশেষ সহায়তা করতে পারে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে ভালো রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল: আদার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বাধা দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
ব্যথা উপশম: আদা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিচিত। এটি মাসিকের ব্যথা, মাইগ্রেনের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা সহ বিভিন্ন শরীরের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের রুটিন এর অংশে আদা খাওয়ার ফলে থার্মো জেনিক বৈশিষ্ট্যের বিপাক বৃদ্ধি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়।
![Cut ginger is placed on the table with ginger juic-min](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/Cut-ginger-is-placed-on-the-table-with-ginger-juic-min.jpg)
আদার ব্যবহার
আদা বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর একটি ভেষজ ঔষধ এবং মসলা, যা আমরা বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকি। যেমন, মাংস, মাছ, ডিম ও আরও বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারে এর ব্যবহার হয়েই থাকে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেসিপি হল “আদা চা”, সকাল বেলার ব্রেকফাস্ট হোক কিংবা সন্ধ্যে বেলার স্নাক্স, এই আদা চা ছাড়া চলবেই না।
![Ginger is chopped with lemon garlic-min](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/09/Ginger-is-chopped-with-lemon-garlic-min.jpg)
আদা সেবন করার আগে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। Some disadvantages of ginger.
পেটের সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণে আদা খাওয়ার কখনো কখনো পেটে জ্বালা, গ্যাস, অম্বল ও ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন অস্বস্তি হতে পারে।
লো ব্লাড সুগার: এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা প্রি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে যদি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ ওষুধ গ্রহণ করে তবে আদা এবং এই ওষুধগুলি সংমিশ্রণ হাইপোগ্লাইসেমিক হতে পারে।
গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদান: আদা প্রায়ই গর্ভাবস্থায় সকালের বমি বমি ভাব ও অসুস্থতা উপসম করতে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি পরিমাণে বেশি খাওয়া একদম উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় অত্যধিক পরিমাণে আদা খাওয়ার পরামর্শ একদমই দেওয়া হয় না, কারণ এটি জরায়ু উত্তেজক প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের প্রতিকার হিসেবে আদার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন গাইনোলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
রক্তপাত জনিত ব্যাধি: এটি রক্ত পাতলা করার মতো বৈশিষ্ট্য রাখে, যা কিছু পরিস্থিতিতে উপকারী হতে পারে। তবে রক্তপাত জনিত ব্যাধি যুক্ত ব্যক্তি বা যারা অস্ত্র প্রচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে আদা খাওয়ার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এলার্জি: যদিও আদা থেকে এলার্জি হওয়া খুবই বিরল, তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ত্বকের জ্বালা, চুলকানি, আমবাদ শ্বাসকষ্টের মতো অসুবিধা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করে এটি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত, যাতে আপনি এরকম সমস্যায় না পড়েন।