স্ট্রবেরি হলো এক ধরনের ফল যা তার মিষ্টির স্বাদ এবং সরস গন্ধের জন্য পরিচিত। এটি Fragaria গণের অন্তর্গত এবং Rosaceae পরিবারের অংশ। স্ট্রবেরি ছোট, উজ্জ্বল লাল ও হৃদয় আকৃতির ফল, যার বাইরের অংশে ক্ষুদ্র বীজ থাকে। যদিও এর সাদা এবং হলুদ জাত রয়েছে। এই ফলের শীর্ষে একটি সবুজ পাতাযুক্ত টুপি বা কান্ড রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন রন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ট্রবেরির একটি মিষ্টি স্বাদ রয়েছে। এটি সব বয়সের মানুষ পছন্দ করে এবং এগুলিকে তাজা খাওয়া, স্নাক্স, ডেজার্ট এবং বিভিন্ন পানীয় খাবারের জন্য পছন্দ করা হয়।
স্ট্রবেরি বিশ্বের অনেক জায়গায় হয় এবং সাধারণত বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হিসেবে এটি চাষ করা হয়। এদের বৃদ্ধির জন্য সুনিষ্কাশিত মাটি, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রয়োজন। এই ফল সাধারণত অঞ্চলের উপর নির্ভর করে বসন্ত এবং গ্রীষ্মের ঋতুতে হয়ে চাষ করা হয়ে থাকে।
স্ট্রবেরি ভিটামিন সি, ফোলেট, ডায়েটারি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস এবং এগুলোতে ক্যালরি এবং চর্বি কম থাকে, যা তাদের একটি বিশেষ গুণ।
স্ট্রবেরির পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।
100 গ্রাম কাঁচা স্ট্রবেরি ফলের পুষ্টি:
- ক্যালোরি: 32
- প্রোটিন: 0.7 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 7.7 গ্রাম
- চিনি: 4.9 গ্রাম
- ফাইবার: 2 গ্রাম
- ফ্যাট: 0.3 গ্রাম
- জলের পরিমাণ: 91%
- Vitamin C: প্রায় 58.8 মিলিগ্রাম (দৈহিক RDA এর 98%)
- Vitamin A: প্রায় 12 IU (আন্তর্জাতিক ইউনিট)
- Vitamin K: প্রায় 2.2 মাইক্রোগ্রাম
- Vitamin B9: pray 24 মাইক্রোগ্রাম
- পটাশিয়াম: প্রায় 153 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: প্রায় 13 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: প্রায় 24 মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ: প্রায় 0.386 মিলিগ্রাম (RDA এর 19%)
- আয়রন: প্রায় 0.41 মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: প্রায় 16 মিলিগ্রাম
ভিটামিন:
স্ট্রবেরিতে অসাধারণভাবে ভিটামিন C রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইউনিয়ন সিস্টেম সমর্থন, স্বাস্থ্যকর ত্বকের প্রচার, কোলাজেন উৎপাদনের সহায়তা এবং কোষেকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরিতে অল্প পরিমাণে ভিটামিন A উপস্থিত থাকলেও এটি সুস্থ দৃষ্টি শক্তি বজায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ও ইউনিয়ন ফাংশন সমর্থন করতে সহায়তা করে। ভিটামিন K রক্ত জমাট বাঁধা, ক্ষত নিরাময় ও ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে হাড়কে মজবুত রাখে। ফোলেট ভিটামিন B9 নামেও পরিচিত। এটি কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণ করে গর্ভাবস্থায় কিছু জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে এবং সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে।
খনিজ:
ম্যাগনেসিয়াম অন্যান্য খনিজের মতন প্রচুর পরিমাণে না থাকলেও এটি পেশী ও স্নায়ু ফাংশন বজায় রাখে, স্থির হার্টবিট বজায় রাখে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সমর্থন করে। পটাশিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ যা সঠিক রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখে, শরীরের তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট ও পেশির ফাংশন সমর্থন করে। স্ট্রবেরিতে বেশ ভালো পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এটি হাড়ের স্বাস্থ্য এবং বিকাশ, কার্বোহাইড্রেট অ্যামিনো এসিড এবং কোলেস্টেরল বিপাক, এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহায়তা করে।
খাদ্যতালিকাগত ফাইবার:
যদিও খাদ্যতালিকাগত ফাইবার ভিটামিন বা খনিজের মধ্যে পড়ে না, তবে এই খাদ্যতালিকাগত ফাইবার স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে আছে এবং এর অনেকগুলো স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যকর হজম, রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণতা অনুভূতি প্রচার করে এবং ওজন ব্যবস্থাপনায় সমর্থন করে।
স্ট্রবেরির বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। Various health benefits of strawberries.
স্ট্রবেরি শুধুমাত্র সুস্বাদু একটি ফল নয় বরং তাদের সমৃদ্ধ পুষ্টির প্রোফাইল এবং বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ যৌগের উপস্থিতির কারণে এটি বহু স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: স্ট্রবেরি ভিটামিন C, অ্যান্থোসায়ানিন, কোয়ারসেটিন এবং এলার্জিক এসিড সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিকেল ক্ষতির থেকে লড়াই করতে সাহায্য করে, দীর্ঘস্থায়ী রোগের এবং বার্ধক্যের ঝুঁকি কমায়।
হার্টের স্বাস্থ্য সমর্থন: এই ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবার হৃদরোগের স্বাস্থ্যের অবদান রাখতে পারে। এটি রক্তচাপ ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, কার্ডিওভাসকুলার ফাংশন উন্নতি করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, উন্নত ইউনিয়ন ফাংশন গঠন করে বিভিন্ন হৃদয় সম্পর্কিত রোগের থেকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে: স্ট্রবেরিতে তুলনামূলকভাবে কম ক্যালরি রয়েছে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, এবং উচ্চ ফাইবার উপাদান শরীরকে পূর্ণতার অনুভূতি প্রচার করে অতিরিক্ত খাওয়া কমায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য: এই ফলে থাকা ভিটামিন K, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সুস্থ হাড় বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বকের সুরক্ষা: এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ করে ভিটামিন C কোলাজেন উৎপাদন প্রচার করে। অতিবেগুনি বিকিরণ এবং দূষিত থেকে ত্বকের ক্ষতি হাওয়া রক্ষা করে, স্বাস্থ্যকর এবং আরও তরুন্যনয় ত্বকের অবদান রাখতে পারে।
চোখের সুরক্ষা: ভিটামিন C এবং অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্ট ছানি এবং বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার সমস্যা ঝুঁকি কমায় ও চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: কিছু গবেষণা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে স্ট্রবেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যেমন এলার্জিক অ্যাসিড ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার কোষকে বৃদ্ধি পেতে বাধা দেয়।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: এতে তুলনামূলকভাবে কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, এর অর্থ রক্তের শর্করার মাত্রার উপর ন্যূনতম প্রভাব রয়েছে। এটি ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বা এই অবস্থায় ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে।
পেটের স্বাস্থ্য: খাদ্যতালিকাগত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং নিয়মিত মল ত্যাগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর হজমে সহায়তা করে।
স্ট্রবেরি খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার
স্ট্রবেরি এমনিতেই খুবই মিষ্টি একটি ফল। এটি কাঁচা অবস্থায় ও আরো বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন স্ট্রবেরি মিল্কশেক, স্ট্রবেরি চকলেট শেখ, পুডিং, জেলি, জ্যাম, জুস, কেক, স্ট্রবেরি ফিরনি, চাটনি, স্ট্রবেরি ছানার পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ, স্ট্রবেরি মাখা, সালাদ, আইসক্রিম, স্ট্রবেরি কুকি, মিষ্টি, বিভিন্ন খাবার গার্নিশিং, সহ আরো বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রয়েছে যা স্ট্রবেরি থেকে বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
স্ট্রবেরি একটি সুস্বাদু ফল তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। Strawberries are a delicious fruit but have some side effects.
অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষের স্ট্রবেরি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে সেক্ষেত্রে চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা বা অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমন অসুবিধা লক্ষ্য করলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা দরকার।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: খালি পেটে বা প্রচুর পরিমাণে স্ট্রবেরি খাওয়া পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস, পেট জ্বালা এসিড রিফ্লাক্স বা ডায়রিয়ার মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
কিডনিতে পাথর: এই ফলে অক্সালেট রয়েছে, যা সংবেদনশীল ব্যক্তিদের কিডনিতে পাথর গঠনে অবদান রাখতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি কিডনিতে পাথরের মতো সমস্যা আগে থেকেই থেকে থাকে তবে তাদের খুবই পরিমিত ভাবে এই ফল গ্রহণ করা উচিত।
হিস্টামিন সামগ্রী: এই ফল খাওয়ার পর কিছু মানুষের মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা বা ত্বকের সমস্যার মধ্যে উপসর্গ হতে পারে, কারণ এতে হিস্টামিন রয়েছে।
মৌখিক স্বাস্থ্য: এই ফলে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে, বিশেষ করে যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়।
ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: আপনি যদি কিছু ওষুধ গ্রহণ করেন, যেমন রক্ত পাতলা করার ওষুধ (ওয়ারফরিন), তবে স্ট্রবেরি খাওয়ার সময় আপনার সতর্ক থাকা উচিত। কারণ এতে উচ্চ ভিটামিন K উপাদান রয়েছে, যা ওষুধ গুলির কার্যকারিতা হস্তক্ষেপ করতে পারে। খাদ্যতালিকাগত সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানার জন্য একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা দরকার।