নিম গাছের ঔষধি গুন, উপকারিতা ও অপকারিতা। Neem Tree.

নিম গাছ অত্যন্ত পরিচিত এবং উপকারী একটি ঔষধি গাছ। এটি Meliaceae পরিবারের অন্তর্গত যা বৈজ্ঞানিকভাবে Azadirachta indica নামে পরিচিত। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান সহ ভারতেও এর প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। এই গাছের উচ্চতা 15-20 মিটার (49-66 ফুট) পর্যন্ত লম্বা এবং ধূসর-বাদামি ছাল যুক্ত হয়। এর পাতা গাঢ় সবুজ রঙের হয় যা চূর্ণ করার সময় একটি তীব্র, ঝাজালো গন্ধ নিঃসৃত করে। নিম গাছের ফল সাদা এবং সুগন্ধযুক্ত হয়। এটি পাকা অবস্থায় হলুদ এবং মিষ্টি স্বাদ দেয়, এর ফল ছোট এবং গোলাকার আকৃতির হয়ে থাকে, যা থেকে পুনরায় একটি নিম গাছ উৎপন্ন হতে পারে। নিম গাছ তার অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিসেপটিক এর জন্য বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার হয়। এর ফল, পাতা, ছাল, কাঠ সমস্তই ঔষধি গুনে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের কাঠ বহু বছর পর্যন্ত ভালো থাকে এবং ঘুন ধরে না। নিম ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজে সমৃদ্ধ।

Green background with neem leaves behind

নিমের পুষ্টি, ঔষধি গুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। Nutrition, medicinal properties and health benefits of neem. 

ভিটামিন ও খনিজ: নিম পাতায় অল্প পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে, যায় মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন A, C, E, B6 বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকার এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে যুক্ত। নিম পাতা আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো খনিজ সরবরাহ করে যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  

চুলের যত্নে: নিমের এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল মাথার ত্বকের সংক্রমণ, খুশকি, অকালে চুল পাকা, উকুন দূর করা, ইনফেকশন এবং আরও অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। নিম তেল দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে এবং ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন E চুলকে নরম ও চকচকে করে তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

ত্বকের রক্ষা: নিমের এন্টিব্যাকটেরিয়াল ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ত্বক পরিষ্কার করে এবং এন্টি-মাইক্রোবিয়াল দাদ এবং ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এন্টি- ইনফ্ল্যামেটরি একজিমা, চুলকানি, লাল ভাব এবং জ্বালার মতো উপশম থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বকের কালো দাগ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। মুখে ফুসকুড়ি, ব্রণের মতো সমস্যায় নিম পাতার রস বিশেষভাবে কার্যকর। 

পেটের রক্ষা: নিম পাতায় উপস্থিত আন্টি ইনফ্লামেটরি পেটের সমস্যা, যেমন হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ আরো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করে এবং শরীরে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে পেটকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। নিমপাতা কে বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে যেমন নিম চা, নিম পাতা শুকিয়ে গুড়া, নিম ক্যাপসুল। নিমে উপস্থিত হেপাটো প্রোটেকটিভ লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এবং এই গাছের ছাল পেট সংক্রান্ত রোগ যেমন, অশ্ব, কৃমি, মূত্রনালীর রোগ, ডায়াবেটিস, আলসার এর মত সমস্যার সমাধান করে। 

কাঁচা নিম পাতা: রোজ সকালে খালি পেটে নিম পাতা খেলে মুখে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন মুখের রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এটি ব্লাড সুগার লেভেল সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়া, মধুমেহ, রাতকানা রোগের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। এই পাতা জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, বাত, ভাইরাল ইনফেকশন দূর করতে ও বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

ওজন নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার ফলে মেটাবলিজম বেড়ে যায় এবং কোলেস্টেরল কমতে থাকে। এর কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ হতে থাকে। 

চুলকানি বা এলার্জি নিরাময়: নিম পাতা একটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যুক্ত ওষুধি পাতা, যা বিভিন্ন চামড়ার রোগের থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। যদি কারো চুলকানি বা এলার্জির মতন সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন নিমপাতা গরম জলে ফুটিয়ে তাতে স্নান করতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন নিয়মিত করার ফলে চুলকানি বা এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

দাঁতের স্বাস্থ্য: নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়, যেমন দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত, দাঁতের মধ্যে হাওয়া ব্যাকটেরিয়া, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া, দাঁত হলুদ হয়ে যাওয়া, মুখে দুর্গন্ধ সহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যেতে পারে। 

Health benefit of neem leaves

কিছু ক্ষেত্রে নিম পাতা এড়িয়ে চলতে হবে। Neem leaves should be avoided in some cases.

লিভার ও কিডনির সমস্যা: নিম পাতার মধ্যে থাকা কিছু যৌগ লিভার এবং কিডনির সমস্যার কারণে হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা খাওয়ার ফলে লিভার এবং কিডনির উপর বিশেষ্য চাপ সৃষ্টি করে এবং যাদের আগে থেকেই এই সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিম পাতা গ্রহণ করা উচিত।

এলার্জির প্রতিক্রিয়া: নিম পাতা সম্পূর্ণ এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হলেও এর থেকে কিছু মানুষের এলার্জির মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বকের মধ্যে ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়ার, চুলকানি, ছোট ছোট ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট এর মতো আরও গুরুতর প্রতিক্রিয়া। 

হাইপোগ্লাইসেমিয়া: নিম পাতা শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে পারে এবং এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে বেশ কিছু ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার মাত্রা সঠিকভাবে পরিচালনা না কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। 

হরমোন ইমব্যালেন্স: নিম পাতা মাসিক চক্র সহ শরীরের বিভিন্ন হরমোনের উপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের স্বাভাবিকের তুলনায় হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে, তবে এই সময় নিম পাতা হরমোনের মাত্রা ইমব্যালেন্স করে দিতে পারে। যার কারণে বাচ্চা এবং মায়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই নিম পাতা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নিম পাতা গর্ভনিরোধক এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি কোনো মহিলা গর্ভধারণের চেষ্টা করে থাকেন তাহলে নিম পাতা এড়িয়ে চলাই ভালো। 

বিশেষ কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: নিম পাতা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটাতে পারে এবং তাদের কার্যকারিতা প্রভাবিত করে শরীরে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিম পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্য সেবকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। 

রক্ত জমাট বাধা: নিম পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিপ্লালেটলেট রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিম পাতা খাওয়ার আগে সতর্ক অবলম্বন করা উচিত। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *