ইন্ডিয়ান গুজবেরি আমলা গাছ নামেও পরিচিত। এটি একটি বোটানিক্যাল ফল গাছ, যা Phyllanthaceae পরিবারের, Phyllanthaceae emblica নামে পরিচিত। একটি মাঝারি আকারের আমলা গাছ 5 থেকে 20 মিটার (16 থেকে 66 ফুট) উচ্চতার হতে পারে। এই গাছের পাতা ছোট, লম্বা, সবুজ ও ফুল গুলো খুবই ছোট, সাদা থেকে হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। আঁকা ফল গুলো সাধারণত ছোট, সবুজ এবং গোলাকার আকৃতির হয়ে থাকে, যা প্রায় 1 থেকে 2 সেন্টিমিটার ব্যাসের হয়। সবুজ রঙ যুক্ত আমলা ফল গুলো একটু টক স্বাদের হয়, যার ভিতরের অংশে একটি কালো বীজ থাকে। এটি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ এশিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। এটা বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডল এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে। আমলা এমন একটি ফল, যা বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক মতো ওষুধি পদ্ধতিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও এই ফলটি বিভিন্ন পুষ্টি, vitamin C, A, B কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সম্পন্ন। এই গাছের ফল, পাতা সহ বিভিন্ন অংশ ভেষজ পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন চুল, ত্বক, হজম সমস্যা, পেটের সমস্যা ও বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়ের জন্য উপকারী। এই ফল শুধু ঔষধি উপায়ে খাওয়া হয় এমন না, বিভিন্ন রন্ধনসম্পর্কীয় প্রণালীতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন আচার তৈরি, জ্যাম, চাটনি জুস ও আরও বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার বানানো যেতে পারে।
জেনে নিন কীভাবে আমলা ব্যবহার করবেন এবং কী কী উপকার পাবেন। Know how to use Amla and what benefits you will get.
1. চুলের যত্নে আমলার ব্যবহার (Uses of Indian gooseberry in hair care): আমলা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার, যা চুলের বৃদ্ধি, চুল পড়া রোধসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ট্রাইকোলজিস্ট (চুল বিশেষজ্ঞ) বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া খুবই দরকার।
- আমলা তেল: আমলা তেল মুদিখানার কিংবা কসমেটিকসের দোকানে খুব সহজেই পাওয়া যায়। অথবা আপনি এটা ঘরের খুব সহজেই তৈরি করতে পারেন (শুকনো আমলকি টুকরো, নারকেল তেল বা তিলের তেল মিশিয়ে)। এই তেলটি হালকা গরম করে আঙ্গুলের সাহায্যে গোটা স্ক্যাল্পে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে একটি নরমাল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলা ও শিকাকাই হেয়ার মাস্ক: এই হেয়ার মাস্ক তৈরি করার জন্য প্রথমে দই বা নরমাল জলের সাথে আমলার পাউডার মিশিয়ে নিন। তারপর চুলে এবং মাথার ত্বকে এই প্যাকটি লাগিয়ে 30 মিনিটের জন্য ছেড়ে দিন। 30 মিনিট পর হালকা উষ্ণ গরম জলের সাহায্যে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও শিককাই হল আমলার মতো আরেকটি প্রাকৃতিক ভেষজ, যা আপনার চুলের জন্য খুবই মূল্যবান। আমলা পাউডার এবং শিকাকাই পাউডার একসাথে জলের মধ্যে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেটি আপনার চুলে লাগান, কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে তারপরে সেটি নরমাল জলের সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলা শ্যাম্পু: বেশ কিছু হারবাল শ্যাম্পুর সাথে আমলার রস মেশানো থাকে, যা আমাদের চুলের জন্য খুবই ভালো। আলাদাভাবেও কিছু স্টোরে আমলার তৈরি শ্যাম্পু রয়েছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
- আমলার জল এবং জুস: শুকনো আমলার টুকরো গুলো জলে সিদ্ধ করে ছেঁকে নিন, তারপর সেটি চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করুন। এটি আপনার চুলকে উজ্জ্বল ও চকচকে করবে এর সাথে খুশকি কমাতেও সাহায্য করবে। আমলার রস সেবনের দ্বারা চুলকে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে, এর উচ্চ ভিটামিন সি আপনার চুলের জন্য খুবই উপকারী।
- আমলা ঔষধ: যদি আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনের জন্য আমলাকে বেছে নেন, তবে এটি ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায়, যা আপনার চুলের জন্য খুবই ভালো। এটি আপনার চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী বানায়, চুল পড়া রোধ করে, চুলের বৃদ্ধি করে, অকালে চুল পেকে যাওয়া কমায়, চুলের গঠনকে মজবুত করে, খুশকি কমায় এবং মাথার ত্বকের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে।
2. ত্বকের যত্নে আমলার ব্যবহার (Uses of Indian gooseberry in skin care): আমলার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল।
- আমলা ফেস মাস্ক: মধু বা টক দই এর সাথে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে নি, তারপর সেটি চোখ বাদ দিয়ে গোটা মুখে, ঘাড়ে ও গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর উষ্ণ গরম জলের সাহায্যে মুখটি পরিষ্কার করে নিন। এই ফেস মাস্কটি আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াবে এবং ব্রন সহ আরও অন্যান্য কালো দাগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।
- আমলা টোনার: টোনার আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ভালো, আপনি যদি মার্কেটের কেমিক্যাল যুক্ত টোনার ব্যবহার করতে না চান তবে খুব সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমলকির সাহায্যে টোনার বানাতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে টোনার বাড়ানোর জন্য পরিমাণ মতো জল দিয়ে আমলার রসকে পাতলা করে নিতে হবে, তারপর একটি তুলোর সাহায্যে সেটি আপনার গোটা মুখে পাতলা ভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এই টোনার আপনার ত্বকের পিএইচ এর ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্রগুলো নিরাময় করবে।
- আমলা ক্যারিয়ার তেল: আমলা ক্যারিয়ার তেল, নারকেল তেলের মধ্যে সামান্য পরিমাণে আমলা পাউডার মিশিয়ে নিয়ে এটি তৈরি করা যায়। প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে অল্প পরিমাণে এই তেলটি হাতে নিয়ে খুব আলতোভাবে গোটা মুখে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে এবং ত্বকের সম্পূর্ণ পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।
- আমলা স্ক্রাব: একটি মৃদু এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব তৈরি করার জন্য আমলা পাউডারের মধ্যে এক চামচ দই এবং অল্প পরিমাণে গুড়ো করা চিনি মিশিয়ে নিয়ে ভালোভাবে হাতের সাহায্যে গোটা মুখে মেসেজ করে নিয়ে 10 মিনিট রেখে উষ্ণ গরম জলের সাহায্যে সেটা তুলে ফেলতে হবে। এই স্ক্রাবটি মৃত ত্বকের কোষগুলিকে অপসারণ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- আমলা ফেস ক্লিনজার: আমলা প্রাকৃতিক ফেস ক্লিনজার হিসেবে খুবই ভালো। অল্প পরিমাণে আমলার রস মুখে লাগিয়ে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করে নরমাল জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যাদের অয়েলি স্কিন রয়েছে তাদের জন্য এই ক্লিনজার খুবই কার্যকরী, কারণ এটি আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্নে আমলা ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা: আপনার ত্বককে ভেতর থেকে ভালো করতে চাইলে, আপনার দৈনন্দিন জীবনে আমলাকে সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করার কথা ভাবতে পারেন। কারণ আমলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে, ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে অকাল বার্ধক্য রোধ করে, এছাড়াও পিগমেন্টেশন, ত্বকের বিভিন্ন দাগ কমায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণ ও পিম্পল মুক্ত, ময়েশ্চারাইজার, পুষ্টি জোগানো সহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।