বহু গুণে সম্পন্ন এই কাকডুমুর এর ভেষজ চিকিৎসা। Ficus hispida

প্রতিটি গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে কত জানা-অজানা গাছ জন্মাতে দেখা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হল ডুমুর। এটি এমন একটি গাছ যাকে যত্ন করে কেউ চাষ করে না, বনে-জঙ্গলে, পাঁচিলের গায়ে, জমিতে বা পুরাতন বাড়ির দেয়ালের চারপাশে চারা হয়ে জন্মে ফল দেয়। ভারতের প্রায় কম বেশি সব জায়গাতেই এই গাছ দেখা যায়, এছাড়াও থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মায়ানমার, মালয়েশিয়া তেও এটি ব্যাপক ভাবে পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে প্রায় ৬০০ প্রজাতির ডুমুর গাছ রয়েছে, তবে আমাদের গ্রাম বাংলায় সাধারণ মানুষ দুই প্রকার ডুমুর চেনে এবং খায়, যার মধ্যে কাকডুমুর (Ficus hispida) ও অন্যটি যজ্ঞ ডুমুর (Ficus glomerata)। কাকডুমুর একটি চিরহরিৎ মাঝারি আকারের গাছ, যা প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এই গাছের পাতাগুলো ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, গাঢ় সবুজ, রুক্ষ, ছোট এবং শুঁয়োপোকার লোমের মতো ছোট-ছোট লোম দ্বারা ঢাকা থাকে। কাকডুমুর গুলি ছোট, গোলাকার এবং সবুজ থেকে শুরু করে পাকার সাথে-সাথে লালচে-বাদামী ও কিছু ক্ষেত্রে কমলা রঙের ও হয়ে থাকে। কাকডুমুর ভেষজ হয়ে থাকলেও এটি রান্নায় খুব কম মানুষই ব্যবহার করে থাকে। তবে এর সবথেকে বেশি ব্যবহার বিভিন্ন ঔষধি প্রক্রিয়ার জন্য হয়। কাকডুমুর গাছের ছাল, পাতা, ফল বিভিন্ন থেরাপি, রক্ত পরিষ্কার করা, জ্বর নিরাময় এবং জন্ডিস সহ বিভিন্ন রোগের জন্য খুবই উপকারী।

Health Benefits of Ripe Ficus hispida are caught on the tree

কাকডুমুর এর ঔষধি উপকারিতা। Medicinal benefits of Ficus Hispida.

পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি: কাকডুমুর ঐতিহ্যগতভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়, বিভিন্ন হজম সংক্রান্ত সমস্যা জন্ডিস সহ আরো বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে শরীর ও পেটকে রক্ষা করে। এই গাছের ছালের মধ্যে ক্ষীরের মতো একটি আঠা রয়েছে, যা অ্যান্টি-ডায়ারিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। 

আন্টি-ইনফ্লেমেটরি ও আন্টি-রিউম্যাটিক বৈশিষ্ট্য: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আন্টি-ইনফ্লেমেটরি ঔষধি গুণের কারণে এতে প্রদাহ বিরোধী প্রভাব রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রদাহ এবং এই সম্পর্কিত অবস্থার উপশম করতে সাহায্য করে। আন্টি-রিউম্যাটিক বাতের ব্যথা এবং বিভিন্ন বেদনানাশক বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহার হয়। 

বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়: বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়কে উন্নত করার জন্য এই ডুমুর গাছের ক্ষীরের মতো সাদা আঠা, কেটে যাওয়া, ত্বকের সংক্রমণের টপিক্যালি প্রয়োগ করা হয়। এটি একটি অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।

Ripe Ficus hispida are caught on the tree

কাকডুমুর গাছের ব্যবহার।

কাকডুমুর গাছের ১০-২০ টি পাতা সহ ডালপালা থেঁতো করে, জলে সিদ্ধ করে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। 

  • কোথাও কেটে গেলে এর প্রলেপ রক্ত বন্ধ হওয়া এবং দ্রুত ঘা সেরে যেতে সাহায্য করে। 
  • ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর কিংবা কোন বিষাক্ত পোকা কামড়ালে সেই ক্ষত স্থানে এই প্রলেপ লাগালে জ্বালা কমে এবং বিষের প্রভাবও নষ্ট হয়ে যায়। 
  • হাতে কিংবা পায়ে থেতলে গেলে বা আঘাত লেগে ফুলে গেলে, তৈরি করা পেস্টটির মধ্যে দু গুণ জল মিশিয়ে সেখানে ভালোভাবে লাগিয়ে দিলে দ্রুত ব্যথা সেরে যায়। 
  • দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতের গোড়ায় ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ, মুখে কিংবা গলায় ঘা সারানোর জন্য প্রলেপ এর মধ্যে ৮ গুণ জল মিশিয়ে ব্যবহার করলেই ১-২ দিনের মধ্যে সেরে যাবে। 
  • এছাড়াও এই গাছের পাতা দূষিত বায়ু ও দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহার হয়। জটিল রোগ, জীর্ণশীর্ণ রোগীদের শক্তি বর্ধন, অর্শ, যকৃতের সমস্যা, রক্তহীনতা, প্রভৃতি রোগ সারাতে খুবই ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই ডুমুর। 

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *