টমেটো একটি ফল হিসেবে বিবেচিত, কারণ এটি ফুলের ডিম্বাশয় থেকে বিকাশ লাভ করে এবং এতে বীজ থাকে। এটি উদ্ভিদ প্রজাতি সোলানাম লাইকোপেরসিকাম থেকে এসেছে। তবে টমেটো কাচা খাওয়ার সাথে রান্নার কাজেও বিশেষ ব্যবহার করে থাকি। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় লাল রঙের, রসালো হয়ে থাকে ও হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। এটি গোলাকার এবং ছোট থেকে মাঝারি ডিম্বাকার আকৃতি এবং ছোট হলুদ রঙের ফুল যুক্ত হয়। টমেটো সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে রন্ধনসম্পর্কীয় খাবারে ব্যবহৃত হয়, যা খাবারের স্বাদ, রঙ এবং পুষ্টি যোগায়। টমেটো গাছ উচ্চতায় খুব একটা বড় হয় না। এই গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য উষ্ণ আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়।
টমেটো বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এবং এতে উপস্থিত লাইকোপেন নামক যৌগ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার সাথে যুক্ত।
![Many red tomatoes together](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/08/Many-red-tomatoes-together.jpg)
টমেটোর বিভিন্ন পুষ্টি (Nutrition’s), ভিটামিন ও খনিজ
100 গ্রাম লাল টমেটোর পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি: 18 কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট: 3.9 গ্রাম
- খাদ্যতালিকাগত ফাইবার: 1.2 গ্রাম
- চিনি: 2.6 গ্রাম
- প্রোটিন: 0.9 গ্রাম
- চর্বি: 0.2 গ্রাম
- Vitamin C: 14 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 23%)
- Vitamin A: 1025 আইইউ (দৈনিক মূল্যের 21%)
- Vitamin K: 7.9 μg (দৈনিক মূল্যের 10%)
- পটাসিয়াম: 237 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 7%)
- ফোলেট: 15 μg (দৈনিক মূল্যের 4%)
- লাইকোপিন: প্রায় 2573 µg
ভিটামিন ও খনিজ: টমেটো ভিটামিন C-এর একটি ভালো উৎস যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
টমেটোতে বিটা- ক্যারোটিন রূপে ভিটামিন A রয়েছে, যা সুস্থ দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখে।
ভিটামিন K হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও রক্ত জমাট বাঁধা থেকে মুক্তি পেতে একটি অপরিহার্য খনিজ।
ভিটামিন B9 DNA গঠন এবং ভ্রুণের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পটাশিয়াম টমেটোর একটি ভালো উৎস, যা তরল ভারসাম্য, স্নায়ুর সংকেত এবং পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
![One whole and one halved tomato](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/08/One-whole-and-one-halved-tomato.jpg)
টমেটোর স্বাস্থ্যের উপকারিতা। Health Benefits of Tomatoes.
হৃদয় স্বাস্থ্য: টমেটোতে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং ফোলেট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে উপস্থিত লাইকোপিন সহ টমেটোতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করে তোলে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: লাইকোপেন টমেটোতে পাওয়া একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সার যেমন ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চোখের সুরক্ষা: ভিটামিন A বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এই পুষ্টিগুলি বয়স সম্পর্কিত এবং অন্যান্য দৃষ্টি সম্পর্কিত সমস্যা গুলি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুরক্ষা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক সুস্থ রাখে এবং টমেটোর উপস্থিত লাইকোপিন ত্বককে UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
![A dish made with tomatoes](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/08/A-dish-made-with-tomatoes.jpg)
রান্নায় টমেটো ব্যবহার
টমেটো সব রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর স্বাদ ও গন্ধ রান্নায় একটা নতুন স্বাদ এনে দেয়। টমেটো বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে এবং কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। যেমন, টমেটো সস, সালাদ, চাটনি, আচার, স্যুপ, টমেটোর ডাল, টমেটো ভর্তা, টমেটো দিয়ে বিভিন্ন তরকারি, টমেটোর পকোড়া, টমেটো কারি, এছাড়া বিভিন্ন স্যান্ডউইচ পিজা, বার্গার, চাউমিন সহ আরও অন্যান্য খাবারে টমেটো যোগ করায় তার স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
![The tree holds red tomatoes](https://nutrifruitveg.com/wp-content/uploads/2023/08/The-tree-holds-red-tomatoes.jpg)
টমেটো স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিতে ভরপুর, তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। Tomatoes are packed with nutrients, but may have some side effects.
অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা অম্বল: টমেটো স্বাভাবিকভাবেই অ্যাসিডিক এবং কিছু ব্যক্তির এটি বেশি পরিমাণ খাওয়ার পর অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস): টমেটোতে উচ্চ ফাইবার উপাদান। এটি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম যুক্ত ব্যাক্তিদের জন্য গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া ও বিভিন্ন হজমের সমস্যা ঘটাতে পারে।
নাইটশেড: টমেটো নাইটশেড পরিবারের অন্তর্গত, যার মধ্যে আলু সহ আরও বিভিন্ন গাছপালা রয়েছে। এই নাইটশেড হজমে অস্বস্তি বা জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
হিস্টামিন উপাদান: হিস্টামিন উপাদানটি মাথা ব্যাথা, আমবাদ ও বিভিন্ন গ্যাসের সমস্যার মতো লক্ষণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
লাইকোপিন উপাদান: টমেটোতে পাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল লাইকোপিন। এই লাইকোপিন একটি ভালো উপাদান তবে এটি অত্যধিক ব্যবহারের ফলে লাইকোপেনোডার্মিয়া নামক একটি অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা তোকে কমলা বা লালচে ভাব সৃষ্টি করে।
কিডনিতে পাথর: টমেটোতে অক্সালেট নামক একটি উপাদান থাকে যা অতিরিক্ত সেবনের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।