কাঁঠাল। Jackfruit

কাঁঠাল অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল। এটি উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু সহ মৌসুমী অঞ্চলের ফল, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভারত সহ আরও বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। কাঁঠাল Moraceae পরিবারের অন্তর্গত এবং এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে Artocarpus Heterophyllus নামে পরিচিত। একটি বড় আকৃতির কাঁঠাল গাছের উচ্চতা প্রায় 50 থেকে 80 ফুট (15 থেকে 24 মিটার) পর্যন্ত হয়ে থাকে। কাঁঠাল গোলাকার আকৃতি বা ডিম্বাকৃতির হয়, এই গাছের পাতা সবুজ ও ছোট আকৃতির হয়ে থাকে এবং ছোট হলুদ রঙের ফুল ধরে যা কিছুটা পাতার মতই দেখতে হয়। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকা অবস্থায় ফল, দুই প্রকারেই গ্রহণযোগ্য। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের হয়, যাকে সাধারণত এঁচোড় বলা হয়ে থাকে। এঁচোড় বিভিন্ন স্বাদে রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ফল পেকে যাওয়ার পর তার ভিতরে থাকা বীজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তবে কাঁঠাল শুধুমাত্র ফল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, এটি বিশেষ ঔষধি গুনেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল  ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সহ আরও বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর। তবে এটি পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে স্বাদের পরিবর্তন ঘটতে পারে।  

There are many jackfruits hanging on the tree

কাঁঠালের পুষ্টি ( Nutrition’s) ভিটামিন ও খনিজের উপকারিতা।

প্রতি 100 গ্রাম কাঁচা কাঁঠালের পুষ্টি রয়েছে:

  • ক্যালোরি- 95 কিলোক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট- 23.2 গ্রাম
  • চিনি- 19.1 গ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার- 1.5 গ্রাম
  • প্রোটিন- 1.5 গ্রাম
  • চর্বি- 0.6 গ্রাম
  • Vitamin C- 13.8 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 23%)
  • Vitamin A- 110 আইইউ (দৈনিক মূল্যের 2%)
  • Vitamin B6 (পাইরিডক্সিন)- 0.329 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 16%)
  • নিয়াসিন (Vitamin  B3)- 0.920 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 5%)
  • রিবোফ্লাভিন (Vitamin  B2)- 0.055 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 3%)
  • ফোলেট (Vitamin  B9)- 24 মাইক্রোগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 6%)
  • পটাসিয়াম- 303 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 9%)
  • ম্যাগনেসিয়াম- 37 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 9%)
  • ক্যালসিয়াম- 34 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 3%)
  • ফসফরাস- 21 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 2%)
  • আয়রন- 0.60 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 3%)
  • জিঙ্ক- 0.42 মিলিগ্রাম (দৈনিক মূল্যের 3%)

ভিটামিন: কাঁঠাল ভিটামিন C এর একটি চমৎকার উৎস, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপন্ন করে শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, ইমিউন সিস্টেম সমর্থন করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়া থেকে সহায়তা করে। ভিটামিন B6 নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণ এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে শরীরকে সাহায্য করে এবং শরীরের অসংখ্য এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন B6 গ্রহণ করায় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা সমর্থন এবং স্বাস্থ্যগত কিছু রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভিটামিন B3 (নিয়াসিন) শরীরের শক্তি উৎপাদন করতে সহায়তা করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সমর্থন করে। এছাড়াও কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন B2, A, B9 ফোলেট সহ বিভিন্ন ভিটামিন যা স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা প্রদান করে।  

খনিজ: এতে ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে, যা হার্টের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ু ও পেশীর কার্যকারিতায় সমর্থন করে। ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম পেশী ফাংশন, স্নায়ু সংক্রমণ, হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আয়রন, ফসফরাস, জিংক সহ আরও বিভিন্ন খনিজ রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। 

জলের পরিমাণ: কাঁঠাল আকার এবং পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে জলের পরিমান পরিবর্তন করতে পারে তবে একটি পাকা এবং বড় আকৃতির কাঁঠালের ৭০-৭৫% জলের পরিমাণ রয়েছে। 

Opened jackfruit is placed on the table

কাঁঠাল খেলে কি উপকার হয়। What is the benefit of eating jackfruit?

ক্যান্সার প্রতিরোধ: কাঁঠালের মধ্যে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

ত্বকের যত্নে কাঁঠাল: এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে, ব্রণ, ডার্ক স্পট, ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এবং ত্বককে আরও উজ্জ্বল এবং সুন্দর করে তোলে। 

সুস্থ দৃষ্টি শক্তি: ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে, এটি চোখের সুরক্ষা এবং বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং চোখের আরও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

হার্টের সুস্থতা: ভিটামিন B6 পাইরিডক্সিন নামে পরিচিত যা স্নায়ুর কার্যকারিতার সাথে বিশেষ ভাবে নিযুক্ত এবং এতে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। 

লো ফ্ল্যাট: কাঁঠালে তুলনামূলকভাবে অনেক কম পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে। যার জন্য এটি ফল হিসেবে ওজন কমানোর একটি ভালো বিকল্প। বেশি পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়ার পরেও আপনি ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। 

রান্নায় ব্যবহার 

কাঁঠাল ফল এবং সবজি দুটো প্রকারেই খাওয়া যায়। এটি রান্না করে খাওয়ার পরও আপনি সমান পরিমাণ স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। কাঁঠালকে মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে এটি নিরামিষ এবং আমিষ দু-ভাবেই খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা বীজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এটি একটি বিশেষ স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।

এঁচোড় এবং কাঁঠালের রেসিপি: এঁচোড় আলুর তরকারি, এঁচোড়ের কোপ্তা, কাঁঠাল বীজের লাড্ডু, কাঁঠালের হালুয়া, কাঁঠালের সন্দেশ, এঁচোড়ের চপ, এঁচোড় চিংড়ি, এঁচোড় দিয়ে মুরগির মাংস, কাঁঠালের বীজ বাটা, কাঁঠালের বীজ দিয়ে আলুর তরকারি, পাকা কাঁঠালের বড়া, কাঁঠালের চিপস, কাঁঠালের প্যানকেক, কাঁঠালের শরবত, কাঁঠালের মালপোয়া, এঁচোড় দিয়ে মসুর ডাল সহ বিভিন্ন রান্নার রেসিপি রয়েছে। আপনি বিভিন্ন ভাবে রান্না করে এর স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।

There are many jackfruits hanging on the tree

কাঁঠাল একটি স্বাস্থ্যকর ফল, তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। Side Effects of Jackfruit.

কাঁঠাল একটি সুপারফুড হিসাবে পরিচিত কিন্তু কিছু লোকের খাওয়া অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।

এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু কিছু ব্যক্তির কাঁঠাল খাবার পর এলার্জির মতো সমস্যা হতে পারে, যেমন সারা গায়ে চুলকানি, ফুলে যাওয়ার বা লাল হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট আরও বিভিন্ন অসুবিধা। যদি কাঁঠাল খাওয়ার পর আপনি এসব সমস্যা গুলি সম্মুখীন হন তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। 

হজমে সমস্যা: কাঁঠালে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ ফাইবার থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠাল খেয়ে ফেলার পরে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য পেট ফোলা, বমি-বমি, গ্যাস সহ বেশ কিছু পেটের সমস্যা হতে পারে। এটি খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাণ মতন খাওয়া উচিত।  

ব্লাড সুগার: পাকা কাঁঠালে প্রাকৃতিকভাবে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা কাঁঠাল খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত কিংবা এটি থেকে বিরত থাকা উচিত, কাঁচা কাঁঠালের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে বেশ সময় লাগে তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *