গর্ভবতী থাকাকালীন একজন মায়ের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ক্যালসিয়াম বাচ্চার দাঁত ও হাড় সৃষ্টি করে সেগুলোকে আরও মজবুত করে তোলে। এছাড়াও ক্যালসিয়ামের সাথে সাথে প্রয়োজন বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি, যা বাচ্চার পরিপূর্ণ গঠনের সহায়তা করবে এবং মা ও বাচ্চা উভয়কেই সুস্থ রাখবে। বিভিন্ন খাবার থেকে একজন গর্ভবতী মা সম্পূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ করে নিতে পারেন। তবে সেই বিশেষ খাবারের মধ্যে ফল হল একটি অন্যতম। জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী থাকাকালীন একজন মায়ের কি কি ফল খাওয়া উচিত এবং সেগুলি কেন খাবেন।
১. কলা: কলার মধ্যে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন B6, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য অতি প্রয়োজন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কলা খেলে বমি বমি ভাব কম হয় এবং এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তজাগ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
২. কমলা লেবু: গর্ভবতী থাকাকালীন একজন মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক পরিমাণে কমে যায়, যার কারণে বারবার অসুস্থ হয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে। কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন অসুখ থেকে বাঁচায়। এছাড়াও এতে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি6।
৩. পাকা পেঁপে: পাকা পেঁপেতে ভিটামিন এ, সি ও বিটাকারোটিন আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সহায়তা করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে খাওয়া পেটের জন্য খুবই ভালো কারণ এটি বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৪. আম: আম এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, C, E, B3, আয়রন, পটাশিয়াম ও ফাইবারের মতো গুরুপূর্ণ পুষ্টি, যা ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বাচ্চার সম্পূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে।
৫. বেদনা: বেদানা ক্যালসিয়াম, ফোলেট, প্রোটিন ও ভিটামিন C তে সমৃদ্ধ একটি ফল। যা খাওয়ার মাধ্যমে ভ্রুনের বৃদ্ধি, শিশুর সঠিক বিকাশ, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং মায়ের শরীরে রক্তের অভাব দূর হয়। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
৬. তরমুজ: তরমুজ গরমের জন্য খুব একটি ভালো ফল এবং এটি অতিরিক্ত গরমেও শরীর ঠান্ডা রাখে যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য খুবই প্রয়োজন। এতে ভিটামিন A, C, B6, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার সহ বিভিন্ন পুষ্টি আছে এগুলি বমি বমি ভাব, সকালের ক্লান্তি ও খাবার হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও এই সময় প্রায় কম বেশি মায়েরই ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে তরমুজ এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৭. পেয়ারা: পেয়ারায় থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও নিয়মিত মলতাকে সহায়তা করে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন বি6 বাচ্ছার স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশ করে।
৮. আপেল: আপেল ফলটি যতটা একটি সাধারণ মানুষের জন্য উপকারী তার চাইতেও দ্বিগুণ উপকারী গর্ভাবস্থায় একটি মায়ের জন্য। আপেলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি যা, মা এবং বাচ্চা দুজনার জন্যই গুরুত্ত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে একটি করে আপেল খাওয়া ক্লান্তি, বমি বমি ভাব বা দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৯. আতা: আতা ফলটি সর্বগুণে ভরপুর। এই ফল খাওয়ার মাধ্যমে ভ্রূণের বিকাশ ঘটে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়, হজম ক্ষমতা বাড়ে, বিভিন্ন ব্যথা নিরাময় হয় এবং মায়ের বুকের দুধ তৈরি হতে সহায়তা করে।
১০. নাশপাতি: নাশপাতিতে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফোলেট যা ভ্রুনের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া নাশপাতিতে রয়েছে ৮৫% জল যা শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করে।
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন একটি মায়ের জন্য এখানে দেওয়া প্রতিটি ফলই খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রত্যেকটি ফলেরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে, যে কোন ফলই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। পরিমিত পরিমাণে এই ফলগুলি গ্রহণ করলে মা এবং সদ্যোজাত শিশু উভয়ের জন্যই খুবই উপকারী।