হৃদরোগ, এটি এমন একটি রোগ যা, বিশ্বের প্রায় সকল মানুষেরই আছে। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, নারী থেকে পুরুষ কেউ নিস্তার পাচ্ছে না এই রোগের হাত থেকে। তবে কি এই হৃদরোগ? কতটাই বা ক্ষতি করতে পারে? আর কিভাবেই বা এটি থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে?
হৃদরোগ, যা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ নামেও পরিচিত। হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলো প্রভাবিত করার অবস্থাকে হৃদরোগ বলে। হৃদরোগ বিভিন্ন ব্যাধিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং অসুস্থতা ও মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হতে পারে।
ধূমপান, জেনেটিক্স, বয়স, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকির কারণ হৃদরোগের বিকাশে আরো বিশেষ অবদান রাখতে পারে। সঠিক জীবনধারা, ওষুধ, নিয়মিত চেকআপ এবং সঠিক খাওয়া-দাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তবে বেশ কিছু ভারতীয় ফল রয়েছে যাদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন সহ আরো অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে, যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থেকে শুরু করে হৃদরোগের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করতে পারে।
হৃদরোগের ৫টি সাধারণ প্রকার। 5 Common Types of Heart Disease.
১. CAD (করোনারি আর্টারি ডিজিজ): এটি হলো হৃদরোগের সবথেকে বেশি প্রচলিত রূপ। যখন রক্তনালী গুলি কর নারী ধমনী হৃৎপিণ্ডের পেশীতে রক্ত সরবরাহ করে প্লাগ তৈরির কারণে অবরুদ্ধ হয়ে যায় তখন এটি ঘটে থাকে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং বুকে ব্যথা হতে পারে।
২. হার্ট ফেইলিউর: হার্ট ফেইলিউর মানে বেশিরভাগ মানুষই ভাবে যে আমাদের হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা, বরং এটি এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে হৃৎপিণ্ড কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করতে অক্ষম হয়ে থাকে।
৩. অ্যারিথমিয়াস: অ্যারিথমিয়াস অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, খুব দ্রুত বা খুব আসতে হতে পারে। এটি রক্তের রক্ত পাম্প করার হার্টের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলিউরের মতো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪. কার্ডিওমায়োপ্যাথি: কার্ডিওমায়োপ্যাথি হৃৎপিণ্ডের পেশী দুর্বল করে ফেলে, যা হৃৎপিণ্ডের পক্ষে কার্যকরভাবে রক্ত চলাচল বা পাম্প করার জন্য অক্ষম হয়ে যায়।
৫. জন্মগত হাটের ত্রুটি: জন্ম থেকেই কিছু মানুষের হার্টের সমস্যা হতে পারে, যা হৃৎপিণ্ডের গঠনকে প্রভাবিত করে সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
হৃদরোগের জন্য কোন ১০টি ফল বেশি উপকারী? Which 10 fruits are more beneficial for heart disease?
১. আপেল: আপেল সব থেকে ভালো ফল, এতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে পেকটিন, যা এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।
২. সাইট্রাস জাতীয় ফল: কমলালেবু, পাতি লেবু, মৌসাম্বি লেবু ও বাতাবি লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড ও অন্যান্য যৌগ রয়েছে, যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৩. কলা: নিয়মিত কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য এবং হার্টের জন্য খুবই উপকারী। কারণ কলাতে রয়েছে বেশ ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা ভিটামিন C, ভিটামিন B6 এবং ফাইবার সামগ্রিক হৃদরোগকে সমর্থন করে।
৪. ডালিম বা বেদানা: বেদানায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, বিভিন্ন প্রদাহ এবং রক্তচাপ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যকে আরো উন্নত করে তোলে।
৫. পেয়ারা: পেয়ারায় রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পেয়ারায় থাকা ফাইবারের উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
৬. আমলকী: ভারতীয় গুজবেরি বা আমলা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে এবং সামগ্রিক হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৭. পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং এনজাইম, যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি, ফোলেট এবং ডায়েটারি ফাইবার সব থেকে ভাল উৎস বলে জানা যায়।
৮. আম: ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আম, হার্টের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত এতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ বেশি তবে পরিমাণ মতো খাওয়া হলে হার্টের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।
৯. জাম: ভারতীয় ব্ল্যাকবেরি বা জাম অ্যান্থোসায়ানিন উপাদানের জন্য বিশেষ পরিচিত, যার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের বিশেষ উন্নতি করে।
১০. কিছু বিদেশি ফল: স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং ব্লু বেরি, অ্যাভোকাডো, কিউইর মতো ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম ও ফাইবার, যা বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে এবং রক্ত প্রবাহ আরও উন্নত করতে, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রেখে হৃদরোগের স্বাস্থ্যের বিশেষ অবদান করে।
ফল সহ বিভিন্ন শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এর মতো আরও অন্যান্য খাবার হৃদরোগ কমাতে সহায়ক। সুষম খাদ্য আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করায় কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের বিশেষ উন্নতি ঘটতে পারে। চিনি যুক্ত খাদ্য বা পানীয়, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকাই ভালো। সঠিক জীবনধারা এবং সঠিক খাদ্য অভ্যাস আপনার স্বাস্থ্য এবং হার্ট দুটোকেই ভালো রাখতে সাহায্য করে।